উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজ চাষ | বিঘা প্রতি পেঁয়াজের ফলন।

আসসালামু আলাইকুম সম্মানিত পেঁয়াজ চাষী কৃষক ভাইয়েরা আমি আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের সামনে তুলে ধরব কিভাবে স্বল্প সময়ে আধুনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার আগেই আমার অনুরোধ থাকলো আপনারা এই পোস্টটি কে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতিতাহেরপুরী পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতিপেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি pdfহাইব্রিড পেঁয়াজ চাষবিঘা প্রতি পেঁয়াজের ফলনপেঁয়াজ বীজ চাষ পদ্ধতিপেঁয়াজ চাষে সার প্রয়োগপেঁয়াজ চাষের সময়রসুনের ফলনহাইব্রিড পেঁয়াজ চাষশীতকালীন পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতিপেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি pdfতাহেরপুরী পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি
তাহলে বুঝতে পারবেন, যে পেঁয়াজ চাষ করতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় এবং করলে পেঁয়াজ চাষে লাভবান হওয়া যায় কিনা। চলুন আমরা মূল আলোচনার দিকে ফিরে যাই।

আরো পড়ুন,

পুষ্টি মূল্য নির্ধারণ।

সম্মানিত পেঁয়াজ চাষি ভাইয়েরা,পেয়াজে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও সামান্য ভিটামিন সি আছে ভেষজ গুণ। পেঁয়াজের যেসব ভেষজ গুণগুলো আছে সেগুলো সামান্য কয়েকটি নিচে তুলে ধরা হল।
  • পেঁয়াজ উত্তেজক হিসেবে কাজ করে থাকে।
  • প্রস্রাবের বেগ বাড়ায়।
  • শাসনালীর মিউকাস কমায়।
  • ঋতুস্রাব বাড়ায়।
  • হজম নালার জ্বালা কমায়।
  • রক্ত পরিশোধন করে।
  • পেঁয়াজ এজমা ও কোষ্ঠকাঠিন্য রূপ কমায়।
  • পেঁয়াজ পোকার কামড়ে বিশুদ্ধ মধুসহ প্রলেপ দিলে জ্বালা কমিয়ে থাকে।
  • কাঁচা পেঁয়াজের রস চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকে

ব্যবহার ও বিধিমালা।

পেঁয়াজ তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও বিভিন্ন মুখরাচক খাবার তৈরিতে পেঁয়াজের ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

পেঁয়াজ চাষের উপযুক্ত জমি ও মাটি নির্ধারণ।

পেঁয়াজ চাষের জন্য পূর্ব আর বেলে দোয়াশ মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য অতি উত্তম বলে বিবেচিত করা হয়। বর্ষায় পেঁয়াজ চাষের জন্য উঁচু জমি দরকার যেখানে বৃষ্টির পানি জমে না সেরকম জমি নির্বাচন করতে হবে। জমিতে শেচ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা যথাযথ ভাবে থাকতে হবে।

পেঁয়াজের বপনের সময়।

পেঁয়াজের বপনের সময় এক মিটার আকারে প্রতি বীজ তলার জন্য ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন পড়তে পারে। পেঁয়াজ রবি ও খরিত মৌসুমে চাষ করা যায়। তাছাড়া খরিফ মৌসুমে চাষের জন্য জুলাই আগস্ট অর্থাৎ শ্রাবণ ও ভাদ্র এবং রবি মৌসুমে চাষের জন্য ফেব্রুয়ারি মার্চ অর্থাৎ মার্চ ও ফাল্গুন মাসে বীজ তলায় বীজ বহন করতে হয়।

জমির আগাছা পরিষ্কার করে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তিন থেকে এক মিটার আকারে বীজ তলা করে নিলে ভালো হয়।এভাবে এক সপ্তাহ রাখতে হবে যাতে বীজ তলার আগাছা গুলো ভালোভাবে নির্ধারণ করা যায়। বীজ বপনের পূর্বে আগের দিন সন্ধ্যায় বীজ ভিজিয়ে রেখে পরের দিন তুলে এক থেকে দুই ঘন্টা রোদে শুকিয়ে নিলে বীজগুলো দ্রুত বের হয়ে যায় এবং অনেকটাই বীজ বের হয় আশঙ্কা মুক্ত থাকে।

বীজ বাপনের পর ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে বিজগুলো ঢেকে দিতে হবে যাতে করে বীজগুলো মাটির ভিতরে হালকা প্রবেশ করতে পারে। বীজ বপনের পরের দিন বেডে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দিনের বেলায় বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে এবং রাত্রে খোলা রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে ঝরনা দিয়ে পানিও দিতে হবে।

চারা রোপন পদ্ধতি।

পেঁয়াজের বীজ রোপনের পূর্বে ৫ চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালোভাবে তৈরি করা উত্তম। পেঁয়াজের চারা ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপন করলে ভাল হয়। বর্ষার সময় ১ মিটারে চওড়া ও বিস্মিটার উঁচু বেড তৈরি করে চারা রোপণ করা ভালো। পেঁয়াজের দুই বেডের মাঝে ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার চওড়া পানি নিষ্কাশনের নানা রাখা উত্তম। এরপর ৪০ থেকে ৪৫ দিন বয়সে চারা লাগানো খুবই ভালো।

সার প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনা।

পেঁয়াজের জমিতে প্রতি হেক্টরে গোবর ১০ থেকে ১২ টন, ইউরিয়া ২৬০ থেকে ২৮০ কেজি, টিএসপি ১৮৫ থেকে ২০০ কেজি এবং 160 থেকে ১৮০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। জমি তৈরির সময় ১৭০ থেকে ১৮০ কেজি ইউরিয়া ও বাকি সমদল স্যার মাটিতে মিশালি ভালো হয়। পেঁয়াজের চারার লাগানোর ২৫ দিন পর বাকি ইউরিয়া সার উপরে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা জমিতে রসের অভাব থাকলে ছেচ দিতে হবে। বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানি দাঁড়াতে না পারে সেজন্য নিক্কাস বা নালা রাখা খুবই প্রয়োজনীয়। জমির আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। সেচের পর নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে, এরপর পেঁয়াজের মুকুল উৎপাদনের ক্ষেত্রে ফুলের কুঁড়ি দেখা মাত্রই ভেঙে দিতে হবে।

পেঁয়াজের পোকার নাম সমূহ এবং চেনার উপায়ঃ

পেঁয়াজের পোকার নাম।

পেঁয়াজের সাধারণত ট্রিপস জাতীয় ছোট আকারে পোকা থাকে। ফলে সহজে নজরে আসে না কিন্তু পাতার রস চুষে খায় বলে অধিক আক্রমণের পাতা শুকিয়ে যায় এবং মরে যায় ও ফলন কমে যায় এ পোকা সহজেই নিধন করা সম্ভব। কেননা বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক পাওয়া যায় সেগুলো প্রয়োগ করলেই এ পোকা নির্ধারণ করা সম্ভব।

পোকা চেনার উপায়।

স্ত্রী পোকা সরু হয়ে থাকে এবং হলুদ আকার ধারণ করে। আর পুরুষ পোকা গাড়ো বাদামি হয়ে থাকে। এরপর ছোট বাচ্চা পোকা গুলো হলুদ ও সাদা হয় এবং এদের পিঠের উপর লম্বা দাগ দেখাও যায়।

ক্ষতির নমুনা।

রস চুষে খায় বলে পাতা রূপালী রং ধারণ করে অথবা ক্ষুদ্রাকৃতির বাদামী দাগ বা ফোঁটা দেখা যায়। এদের আক্রমণ বেশি বলে পাতা শুকিয়ে মরে যেতে পারে এবং গন্ধ আকারে ছোট ও বিকৃতি হয়ে যায়।

পোকার জীবন চক্র।

স্ত্রী পোকাগুলো পাতার কোষের মধ্যে ৫০ থেকে ৫৫ টি ডিম পাড়ে এবং ৫ থেকে ১০ দিনে ডিম হতে বাচ্চা বের হয়ে যায়। ১৫ থেকে ৩০ দিনে দুটি ধাপ অতিক্রম করতে পারে প্রথম ধাপে খাদ্য গ্রহণ করে এবং দ্বিতীয় ধাপে খাদ্য গ্রহণ না করে মাটিতে থাকে। এরা বছরে ৭ থেকে ৮ বার বংশ বিস্তার করতে পারে এবং স্ত্রী পোকা পুরুষ প্রকার সাথে মিলন ছাড়াই বাচ্চা দিতে সক্ষম হয়ে থাকে।

ব্যবস্থাপনাঃ

সাধারণের ১৮ ফাঁদ ব্যবহার ক্ষেত্রে মাকড়সার সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং পোকা দমন করা সম্ভব। অনুমোদিত কীটনাশক নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে

রোগ ব্যবস্থাপনা।

রোগের নামঃ

পারপোল বা ব্লাইটঃ এ রোগ পেঁয়াজের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর করে থাকে যে কোনো বয়সের গাছের পাতা ও কান্ড আক্রান্ত হয়। অধিক আক্রমণে পেঁয়াজের ফুল আসে না এবং ফসল কম হয়ে থাকে। আক্রান্ত বেশিদিন গুদামে রাখা যায় না যা বাজার মূল্য কমে যেতে পারে।

ক্ষতির নমুনা।

  • কাণ্ড প্রথমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি ভেজা হালকা বেগুনি রংয়ের দাগের সৃষ্টি হয় যা দাগগুলি বৃদ্ধি পেয়ে বড় দাগে পরিণত হয় এবং আক্রান্ত স্থান ঘরের মতো হয়ে শুকিয়ে যেতে পারে।
  • আক্রান্ত পাতা ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে শুকিয়ে উঠতে শুরু করে এবং মরে যেতে শুরু করে।
  • তাছাড়া কান্ডের গোড়ায় আক্রান্ত স্থানে দাগ বৃদ্ধি পেয়ে হঠাৎ পাতা ও বীজবাহী কাণ্ড ভেঙে পড়ে এতে অপুষ্ট হয় ও ফলন কমে যায়।
  • অনুকূল পরিবেশ: বৃষ্টিপাত বেশি হলে এই রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে যা আক্রান্ত বীজগাছের পরিত্যাক্ত অংশ ও বায়ুর মাধ্যমে এরূপ বিস্তার লাভ করে থাকে।

ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিঃ

  • রোগ প্রতিরোধ বা সহনশীল জাত ব্যবহার করতে হবে।
  • রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা উত্তম।
  • ফসল পর্যায়ে অনুসরণ করা অর্থাৎ একই জমিতে পরপর কমপক্ষে চার বছর পিয়াজ না লাগানো ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • পেয়াজ গাছের পরিত্যক্ত অংশে আগাছা ধ্বংস করা অতিব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
  • অনুবর্তিত ছত্রাক নাশক নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করা।

কাণ্ড পচা ও রোগের নামঃ

কাণ্ড পচা ও রোগের কারণে শ্লেক রসিয়াম রলফোসি ও ফিউজ আরিয়াম নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।

ভূমিকাঃ যেকোনো বয়সের গাছ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে কান্ড ও শিকড় এর আক্রান্ত দেখা যায় আক্রান্ত কান্ট্রি পচন ধরে এবং আক্রান্ত কান্ড গুদামজাত করে বেশি দিন ধরে রাখা যায় না।

ক্ষতির নমুনঃ

  • আক্রান্ত গাছের পাতা হলদে হয়ে যায় এবং ঢলে পড়ে যা ব্যাপকভাবে ক্ষতি হতে পারে।
  • গাছের কান্ড টান দিলে আক্রান্ত গাছ খুব সহজে মাটি থেকে কাণ্ড সহ উঠে আসতে পারে।
  • আক্রান্ত স্থানে সাদা সাদা ছত্রাক এবং বাদামী বর্ণের গোলাকার ছাত্ররা গুটিসহ দেখা যায়।
  • অধিক তাপ ও আদ্রতা পূর্ণ মাটিতে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে সে ক্ষেত্রে শেচ দিলে এ রোগ বৃদ্ধি পায়।
  • এ রোগের জীবাণু মাটিতে বসবাস করে বিদায় সেচের পানির মাধ্যমে ও মাটিতে আন্তঃপরিচয়্যার সময় হাতিয়ারের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার হয।

করণীয়ঃ

  • আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে।
  • মাটির সব সময় স্যাথ সাথে রাখা যাবে না সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
  • আক্রান্ত জমিতে প্রতিবছর পেঁয়াজ রসুন চাষ না করাটাই ভালো বা চাষ করা যাবে না।
  • অনুমোদিত ছত্রাকনাশক নির্ধারিত সময় প্রয়োগ করতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ

সাধারণত বর্ষা ও মৌসুমে ৪০ থেকে ৪৫ দিন এবং রবি মৌসুমে ৪৫ থেকে ৫৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ তোলার উপযুক্ত সময়। রবি মৌসুমে পেঁয়াজের পাতা মরে গেলে গলা চিকন হলে গাছ সমেত পেঁয়াজ তুলে এনে পাতা শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। প্রতি হেক্টরে হরণ রবিতে ১২ থেকে ১৬ টন এবং খরিফ মৌসুমে ১২ থেকে ১৭ টন পেঁয়াজ ফলন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url