রজনীগন্ধা ফুল চাষ পদ্ধতি | রজনীগন্ধা গাছের পরিচর্যা | রজনীগন্ধা ফুলের বৈশিষ্ট্য ।

আসালামুআলাইকুম, ফুল প্রেমী বা ফুল চাষী ভাই ও বোনেরা, আপনাদের মাঝে আমি আজকে রজনীগন্ধা ফুল নিয়ে কিছু কথা লিখব অবশ্যই আপনারা আমার এই পোস্টটিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। সম্মানিত পাঠক ভাই ও বোনেরা, রজনীগন্ধা ফুলের সুভাষ মানুষের মনে প্রশান্তি বয়ে আনে। বিশেষ করে রাতের বেলায় এর আবেদনময়ী ঘ্রাণ সকলকে পাগল করে তোলে। 
রজনীগন্ধা ফুলের ইংরেজি নামরজনীগন্ধা ফুলের উপকারিতারজনীগন্ধা ফুলের ব্যবহাররজনীগন্ধা ফুল চাষ পদ্ধতিরজনীগন্ধা ফুল কোন ঋতুতে ফোটেরজনীগন্ধা ফুলের দামরজনীগন্ধা ফুলের ছবিরজনীগন্ধা ফুলের বীজটবে রজনীগন্ধা চাষ পদ্ধতিরজনীগন্ধা ফুল কোন ঋতুতে ফোটেরজনীগন্ধা ফুলের বৈশিষ্ট্যলাল রজনীগন্ধারজনীগন্ধা ফুলের বীজরজনীগন্ধা ফুলের চারারজনীগন্ধা ফুল ছবিরজনীগন্ধা ফুলের ইংরেজি নাম
এই ফুল সচরাচর সাদা হওয়ায় বাগানের শোভা বাড়ানো ছাড়া বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান ও গৃহশয্যায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দিন দিন এই ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যপক ভাবে চাষাবাদ হচ্ছে।

আরো পড়ুন,


রজনীগন্ধা ফুলের পাপড়ির শাড়ি অনুযায়ী রজনীগন্ধা দুই বা তিন জাতের হয়ে থাকে যেমন সিঙ্গেল, ও সেমি ডাবল এবং ডবল। যেসব জাতের ফুলের পাপড়ি একটি সারিতে থাকে সে সব জাতি গুলি সিঙ্গেল শ্রেণীবিভক্ত। এবং যেসব জাতির ফুলের পাপড়ি দুই বা তিন সারিতে থাকে সে জাতিগুলোকে সেমি ডাবল বলা হয়। আর দুই বা তিন শাড়ির এর অধিক পাপড়ি থাকলে সে জাতিগুলোকে ডাবল শ্রেণী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

রজনীগন্ধা ফুলের চাষযোগ্য আবহাওয়া।

উপর্যুক্ত বিদ্যের জন্য আদ্র আবহাওয়া এবং গড় তাপমাত্রা ২৫০ থেকে ৩৫০ সেন্টি মিটার হওয়া দরকার যা কিনা পর্যাপ্ত সূর্যালোকসহ উপকূলীয় এলাকায় এবং বর্ষাকাল উৎপাদনের সময় উপযুক্ত বলে বিবেচিত করা হয়েছে। রজনীগন্ধা শীতকালে ফুলের উৎপাদন একেবারে কমে যায় তবে সেমি ডাবল ও ডাবল বিশিষ্ট শীতকালেও ফুল দিতে থাকে।

রজনীগন্ধা ফুলের চাষের জন্য জমি নির্বাচন করা।

জৈব সার সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি হলে খুব ভালো হয় এবং উঁচু ও মাঝারি উচু জমি যেমন পানি বের করে দেওয়ার সুব্যবস্থা আছে সেরকম মাটি হলে সবচেয়ে ভালো হয়। ছায়াহীন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে এবং পানি সেচ ব্যবস্থাও আছে এমন জমি যেমন জমির পিএইচ মান ৬.৫ থেকে ৭.৫ আছে এমন জমি নির্বাচন করাই ভালো।

ফুলের কাণ্ড লাগানোর উপযুক্ত সময়।

রজনীগন্ধা ফুল রবি মৌসুমী অর্থাৎ মধ্য আসীন হতে কার্তিকের শেষে যেমন অক্টোবর হতে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত। আবার খরিফ মৌসুমে পহেলা চৈত্র থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি অর্থাৎ মধ্য মার্চ থেকে এপ্রিলে শেষ পর্যন্ত।

ফুলের কান্ডর সংখ্যা।

একর প্রতি ১২০০০ থেকে ১২৫০০ কাণ্ড লাগাতে পারা যায় তবে ভালো জাতের বিশিষ্ট দেশীয় মাটি ও আবহাওয়া চাষ উপযোগী এবং রোগ বালাই প্রতিরোধ ক্ষম সহজে গাছ হেলে পড়ে না প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে এরকম উন্নত মানের কাণ্ড লাগানোটাই ভালো হবে।

রজনীগন্ধা ফুলের বংশবিস্তার।

সাধারণত কান্ড, রজনীগন্ধার ফুলের চাষ ও বংশ বিস্তার করা হয়ে থাকে। কেননা কান্ড থেকে উৎপন্ন গাছের মাত্র গাছের সকল গুনাগুন বজায় থাকে বলে চাষের উপযোগী।

কাণ্ড রোপন পদ্ধতি।

জমি চাষ দেওয়া শেষ হয়ে গেলে ৫ ফুট প্রশস্ত বেড তৈরি করে নিতে হবে। বেডের প্রতি শারিতে ৭ থেকে ১০ দিন পর কাণ্ড রোপন করা যেতে পারে বা কান্ড রোপন করা উচিত। কান্ড ০ পয়েন্ট থেকে ১ পয়েন্ট ১৮ ইঞ্চি ব্যাচে লাগাতে হবে। প্রতি শারি থেকে শারির দূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং কাণ্ড হতে কাণ্ডের দ্রুত ৮ ইঞ্চি লাগাতে হবে। 

কাণ্ড রোপনের আগে কান্ডের সুব্যবস্থা থাকতে হবে অর্থাৎ এ সময় টুকুতে বীজ গজাবে না তাকে সূযের ব্যবস্থা বলে যেমন কাটানোর জন্য কান্ড গুলোকে চার শতাংশ স্থায়ী ধরিয়া জলীয় দ্রবণে প্রায় ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে ভালো হয়।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ।

প্রথম চাষের সঙ্গে প্রতি বিঘা জমিতে ৩ টন জৈব সার ও খামারের সার মিশ্রভাবে চার থেকে পাঁচ বার গভীরভাবে চাষ দিয়ে আগাছা মুক্ত করে নিতে হবে এবং জমির মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করে নিতে হবে। এরপরে শেষ চাষের আগে প্রতিবিঘাতে ১৪,২৮,২৮ ইউরিয়া, টিএসপি, ও এমওপি স্যার মূল সার হিসেবে জমিতে প্রয়োগ করাই ভালো। 

এটেল মাটিতে ১০% সার কম দিলেও চলবে কেননা দুই মাস পর হতে প্রতি দুই মাস পর পর সাত কেজি ইউরিয়া উপরে প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরীর এবং চারা লাগাবার অন্তত ১৫ দিন আগে শেষ করতে হবে তবে টবে চাষের ক্ষেত্রে দুই ভাগ মাটি ও এক ভাগ পাতা পচা সার দিয়ে লাগানো ভালো এরপর একটি টবে লাগানো যায়।

সেচ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা।

রজনীগন্ধার জমিতে সব সময় রস থাকা বাঞ্জনীয় কেন না গ্রীষ্মকালে সাত দিন পর পর এবং শীতকালে ১০ দিন পর পর শেষ দেওয়া উচিত।

আগাছা দমন প্রক্রিয়া।

রজনীগন্ধা জমির সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে কেননা আগাছা দমনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কান্ডের কোন ক্ষতি না হয়। আর আগাছা দমনে প্রয়োজনে অনুমোদিত আগাছা নাশক ১.৮ কেজি এ করে অতি স্প্রে করতে হবে এবং নিড়ানি প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। গাছ আলো বাতাস এবং পানি যাতে সব সময় পেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিরানির জন্য জমির আদ্রতা ধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং আগাছা মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

পোকামাকর রোগ বালাই এবং দমন পদ্ধতি।

রজনীগন্ধা ফুলের তেমন কোন রোগ খুঁজে পাওয়াটাই খুব মুশকিল তবে বিশেষ করে ধসা রোগ এ রোগ হলে গাছের শিকড় পচন হতে শুরু করে। শেষে গাছের পাতা খসে যায় এবং ফুলের রত্না মাধুরী গুলো মাটিতে পড়ে যেতে পারে।

ব্যবস্থাপনা ও করণীয়।

রজনীগন্ধার আক্রান্ত গাছ গুলো তুলে ধ্বংস করে দিতে হবে এবং গাছের গোড়ায় প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম কুপ্রাভিট, পেনডাজিম, ব্যবহৃত সেভেন, সেই মিশ্রণে দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। এরপর রোগাক্রান্ত গাছে ১৫ দিন পরপর দুই থেকে তিনবার প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম হারে কুপ্রাভিট মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।

শিকড়ের গিট রোগ।

  • রজনীগন্ধা গাছের কৃমি শিকড়ে থাকলে গুটি তৈরি করে দিতে পারে।
  • এ রোগে আক্রান্ত কাছে শিকড়ের মাঝে মাঝে ফুলের গেটের মত দেখা যায়।
  • ফলে গাছের মাটি থেকে খাদ্য ও পানি নেওয়ার ব্যবহৃত হয় না।
  • গাছ সহজে বাড়ে না এবং ফুলও আসে না।
  • গাছ সহজে দুর্বল হয়ে মরে যেতে পারে।

ব্যবস্থাপনা ও পদ্ধতি।

একই জমিতে পরপর দুই থেকে তিন বছর একনাগাড়ে রজনীগন্ধা বা বেগুন জাতীয় ফসল চাষ না করাই ভালো। দুই শারি রজনীগন্ধা গাছের মধ্যে এক শারি গাদা ফুল লাগিয়ে গাদা রজনীগন্ধার মিশ্র চাষ করলে শিকড়ের গেট কিরমি উপদ্রব কমে যায় বলে ধারণা করা হয়। এরপরে জমিতে নিম খৈল ছিটানো যেতে পারে কেননা কাণ্ড রোপনের সময় শাড়ির মাটিতে নিমখয়েল ও নিউফরান ctm সাথে দিতে হবে।

তারপর সেখানে কান্ডর উপর করলে এ রোগ আক্রমণ অনেকটাই কমে যায়। প্রাথমিকভাবে অল্প গাছ আক্রান্ত হলে সেসব গাছগুলো জমি থেকে দূরে সরিয়ে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত গাছের স্থানে মাটি কিছুটা গর্ত করে ঘর জ্বালিয়ে মাটি পুড়াতে হবে।

পাতায় দাগ রোগ সমূহ।

রজনীগন্ধা ফুলের পাতায় রোগের ফলে গাছের পাতা অগ্রভাগ থেকে প্রথম দাগ পড়ে। পরে তা শুকিয়ে বাদামি হয়ে যাই এবং ধীরে ধীরে নিচের দিকে পাতার কিনারে বরাবর ঢেউ-খেলানো দাগের মতো নামতে থাকে। গাছ দুর্বল হয়ে যেতে পারে ।

ব্যবস্থাপনা ও পদ্ধতি।

একই জমিতে পরপর একনাগারের রজনীগন্ধা চাষ না করাই ভালো যা কিনা প্রাথমিকভাবে অল্প গাছ আক্রান্ত হলে সেসব গাছের আক্রান্ত অংশ কেটে এবং পুড়িয়ে ফেলে দেওয়াটাই উত্তম। জমি তৈরির সময় একর প্রতি ছয় থেকে ৯ কেজি হারে রোটন এগ্রো দানাদার প্রয়োগ করলে শিকড়ের রোগ কমে যায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url