মহানবী সাঃ এর দুধ মাতা কত জন | নবীজিকে নিয়ে ফেরার সময় হালিমা তার সাওয়ারি কি করলো।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের (সাঃ) জীবনে তার দুধ মায়াদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে, তার মোট পাঁচজন দুধ মা ছিলেন, যাদের মধ্যে প্রতিটি ছিলেন তার শৈশবের একটি নির্দিষ্ট সময়ে তার পরিচর্যায় নিযুক্ত। এখানে তাদের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

বিস্তারিত আরো জনতে ভিডিওতে ক্লিক করুন

হযরত আমিনা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)

হযরত আমিনা ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর জৈবিক মা। যদিও তিনি সরাসরি দুধ মায়ের ভূমিকা পালন করেননি, তবু নবীজীর জন্মের পর কিছুদিন তিনি নিজেই তাকে স্তন্যপান করান। জন্মের পর প্রথম কয়েক দিন তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর যত্ন নেন এবং স্তন্যপান করান।

সুয়াইবা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)

  • সুয়াইবা ছিলেন আবু লাহাবের দাসী। রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্মের পর তিনি প্রথম যে দুধ মাতা হন। তিনি নবীজীর জন্মের খবর শুনে আনন্দে তাকে দুধ পান করান।
  • সুয়াইবা একইসঙ্গে হযরত হামজা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এবং আবু সালামা ইবনে আবদুল আসাদকেও দুধ পান করিয়েছিলেন। এই কারণে হযরত হামজা (রাঃ) নবীজীর দুধ ভাই ছিলেন।
  • সুয়াইবার এই মহান কাজের জন্য আবু লাহাব মুক্তি পাওয়ার পরও তার প্রতি কিছুটা নরম মনোভাব পোষণ করেছিলেন বলে জানা যায়।

হালিমা সা'দিয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহা)

  • হালিমা সা'দিয়া ছিলেন নবীজীর সবচেয়ে বিখ্যাত দুধ মা।
  • তিনি বনু সা'দ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং পেশায় একজন দাই (নবজাতকের পরিচর্যাকারী) ছিলেন।
  • যখন তিনি নবীজীকে গ্রহণ করেন, তখন তাদের পরিবার আর্থিক সংকটে ছিল। কিন্তু নবীজী তার ঘরে আসার পর থেকেই তাদের জীবনে আশীর্বাদ ও বরকত শুরু হয়।
  • নবীজী তার প্রথম পাঁচ বছর হালিমার ঘরেই কাটান। এই সময়ে তিনি মরুভূমির বিশুদ্ধ পরিবেশে বেড়ে ওঠেন এবং আরবি ভাষার বিশুদ্ধ রূপ শেখেন।

উম্মে আইমান (রাদিয়াল্লাহু আনহা)

  • উম্মে আইমান ছিলেন নবীজীর দুধ মায়ের একজন। তিনি নবীজীর বাবা আব্দুল্লাহর সেবিকা ছিলেন এবং নবীজীকে অনেক ভালোবাসতেন।
  • যদিও তিনি সরাসরি দুধ পান করানোর মায়ের ভূমিকা পালন করেননি, কিন্তু নবীজীর শৈশবে তিনি মাতৃসুলভ ভালোবাসা দিয়ে তার লালন-পালন করেন।
  • তিনি নবীজীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং পরবর্তীকালে নবীজী তাকে বিশেষ সম্মান প্রদান করেন।

বনু সা’দ গোত্রের নারীরাঃ

নবীজীর শৈশবের সময়, আরবের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী বনু সা’দ গোত্রের বেশ কয়েকজন নারী নবীজীকে দুধ পান করান। এর মধ্যে বিশেষ করে হালিমা সা'দিয়ার পরিবার ও তার নিকট আত্মীয়দের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। এটি নবীজীর জীবনে এক বিশুদ্ধ ও সুস্থ পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করে।

মহানবী (সাঃ)-এর দুধ মায়ারা শুধুমাত্র তাকে দুধ পান করিয়েই তাদের কর্তব্য শেষ করেননি, বরং তারা তার শৈশবে মাতৃসুলভ ভালোবাসা এবং পরিচর্যার মাধ্যমে তার বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের এই ভালোবাসা ও যত্ন নবীজীর জীবনে আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিল এবং আরবের বিশুদ্ধ ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে তাকে পরিচিত করিয়েছিল।

বিবি হালিমা সা'দিয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহা) যখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সাঃ)-কে দুধপান করানোর জন্য তার গ্রাম, বনু সা’দ গোত্রে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তার সাওয়ারি বা বাহনের সঙ্গে একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে। এটি ইসলামী ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং নবীজীর জীবনের প্রথম দিকের একটি বরকতময় দিক হিসেবে উল্লেখিত।
ঘটনা বিশদভাবে:

হালিমার আর্থিক অবস্থা ও সাওয়ারির অবস্থাঃ

  • বিবি হালিমা এবং তার পরিবার তখন আর্থিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় ছিলেন। তাদের সাওয়ারি ছিল একটি বৃদ্ধী ও দুর্বল গাধা, যা খুবই ধীরগতির ছিল।
  • অন্যান্য দাই (দুধ মা) যখন নবজাতক শিশুকে গ্রহণ করার জন্য মক্কা যাচ্ছিলেন, হালিমার গাধাটি এতটাই ধীরগতির ছিল যে তারা কাফেলার সবার থেকে পেছনে পড়ে যান।
  • এটি তাদের হতাশ করেছিল, কারণ তারা ভেবেছিলেন যে তারা কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব গ্রহণের সুযোগ নাও পেতে পারেন।

নবীজীর গ্রহণের পর পরিবর্তনঃ

  • বিবি হালিমা যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে গ্রহণ করেন এবং তাকে নিয়ে তার গ্রামে ফেরার জন্য রওনা হন, তখন তার সাওয়ারির আচরণে বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটে।
  • সেই দুর্বল গাধাটি, যা আগে অত্যন্ত ধীরগতির ছিল, হঠাৎ করে খুব দ্রুত ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
  • কাফেলার অন্যান্য নারীরা অবাক হয়ে বলেন, “হালিমা, এটি কি তোমার সেই পুরনো গাধা? এটি এত দ্রুত কীভাবে চলতে শুরু করলো?”
  • হালিমা তখন বুঝতে পারেন যে নবীজীর বরকতের কারণে এই পরিবর্তন ঘটেছে।

অন্যান্য বরকতের সূচনাঃ

  • গাধার দ্রুতগতি ছাড়াও, নবীজীকে গ্রহণ করার পর হালিমা ও তার পরিবারের জীবনে একাধিক আশীর্বাদ ও বরকত দেখা দিতে থাকে:
  • তাদের ভেড়া ও ছাগল দুধে ভরে যায়, যা আগে শুকনো ছিল।
  • খরা ও দুর্ভিক্ষের মধ্যে তাদের খাদ্য ও পানীয়ে আশ্চর্যজনক সমৃদ্ধি দেখা দেয়।
  • পুরো পরিবার শান্তি ও আনন্দে ভরে ওঠে।

এই ঘটনার তাৎপর্যঃ

  • এই অলৌকিক ঘটনা শুধু একটি দৈহিক বা বাহ্যিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত নয়, বরং এটি নবীজীর নবুয়তের প্রাথমিক নিদর্শন হিসেবে দেখা হয়।
  • এটি দেখায় যে নবীজী (সাঃ)-এর উপস্থিতি শুধুমাত্র ব্যক্তির নয়, বরং সমগ্র পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  • ইসলামী ঐতিহ্যে এটি নবীজীর বরকতের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে গণ্য হয়।

বিবি হালিমার দুর্বল গাধার হঠাৎ শক্তিশালী হয়ে দ্রুত চলার ঘটনা তার জীবনে নবীজীর আগমনের বরকতের প্রথম প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতে সমগ্র মানবজাতির জন্য নবীজীর জীবনের আশীর্বাদ এবং নবুয়তের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণের একটি দৃষ্টান্ত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url