ফাইভারে গিগ তৈরির পদ্ধতি।

ফাইভার (Fiverr) হলো বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি। এখানে ফ্রিল্যান্সাররা নিজেদের দক্ষতা বা সেবা গিগ (Gig) আকারে উপস্থাপন করে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে কাজ পান। 

ফাইভারে গিগ তৈরির পদ্ধতি।ফাইভারে কি ফ্রি গিগ তৈরি করা যায়?ফাইভার গিগ কিভাবে প্রকাশ করব?Fiverr গিগের বর্ণনা কিভাবে লিখতে হয়?ফাইভারে কাজ পাওয়ার সঠিক উপায় কী?কিভাবে গিগ তৈরি করতে হয়গিগ মানে কিফাইবার গিগ কিনতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেস কোনটি?গিগ ক্লিকারগিগ ইকোনমি কিফাইবার একাউন্ট খোলার নিয়মশিক্ষার্থীদের জন্য ফাইভার চাকরিফাইভারে কি ফ্রি গিগ তৈরি করা যায়?ফাইভারে কাজ পাওয়ার সঠিক উপায় কী?গিগ করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কি?গিগ এর অর্থ কী?গিগ মানে কিফাইবার গিগ কিনতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেস কোনটি?গিগ ইকোনমি কিফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবোফ্রিল্যান্সিং এর টাকা পাওয়ার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম কোনটিগিগ ক্লিকার

আপনি যদি ফাইভারে আয় করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই একটি আকর্ষণীয় ও প্রফেশনাল গিগ তৈরি করতে হবে।

এই লেখায় ধাপে ধাপে জানাবো:

  • গিগ কী?
  • কেন ভালো গিগ দরকার?
  • কিভাবে একটি পারফেক্ট গিগ তৈরি করবেন?
  • এবং সফল গিগের জন্য কিছু অতিরিক্ত টিপস।

গিগ (Gig) কী?

ফাইভারে গিগ হচ্ছে আপনার প্রদেয় সেবার একটি প্যাকেজ। আপনি কোন সেবা দিবেন, কত সময় লাগবে, কত টাকা চার্জ করবেন — এই সবকিছুর বিস্তারিত বর্ণনা গিগের মধ্যে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ:

“আমি আপনার জন্য একটি প্রফেশনাল লোগো ডিজাইন করব ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।”
এই একটি বাক্যেই বোঝানো হলো — আপনি কী করবেন, কীভাবে করবেন, এবং কত সময় লাগবে।

গিগ তৈরির পূর্বশর্ত

  • একটি গিগ তৈরি করার আগে আপনার অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো থাকতে হবে:
  • ফাইভার একাউন্ট (সেলার হিসেবে)
  • ইমেইল ও মোবাইল নম্বর ভেরিফায়েড
  • একটি নির্দিষ্ট স্কিল বা সার্ভিস নির্বাচন করুন
  • পেশাদার মনোভাব — কারণ গিগ মানেই আপনার "পণ্য"।

গিগ তৈরির ধাপসমূহ

  • এখন চলুন গিগ তৈরির ধাপগুলো দেখি।
  • "Create a New Gig" এ ক্লিক করুন

গিগের নাম/টাইটেল দিন (Gig Title)

এখানে সংক্ষিপ্ত, নির্দিষ্ট এবং আকর্ষণীয় টাইটেল ব্যবহার করুন।

টিপস:

  • "I will" দিয়ে শুরু করুন
  • 80 অক্ষরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন
  • কীওয়ার্ড যুক্ত করুন

উদাহরণ:

  • I will design a modern minimalist logo

ক্যাটেগরি ও সাব-ক্যাটেগরি নির্বাচন করুন

আপনার সার্ভিস অনুযায়ী সঠিক ক্যাটেগরি নির্বাচন করুন।

উদাহরণ:

  • Logo design > Graphics & Design > Logo Design
  • SEO writing > Digital Marketing > Content Marketing
  • সাব-ক্যাটেগরি ও সার্ভিস টাইপ বেছে নিন। ট্যাগ/কীওয়ার্ড যোগ করুন (যেমন: logo, branding, minimalist design)

গিগ প্যাকেজ তৈরি (Pricing Section)

  • এখানে আপনি তিনটি প্যাকেজ দিতে পারবেন:
  • Basic – সাধারণ/ছোট সার্ভিস
  • Standard – মাঝারি সার্ভিস
  • Premium – পূর্ণাঙ্গ সার্ভিস
প্রতিটি প্যাকেজে যা যা থাকবে, কত সময় লাগবে, এবং কত দাম হবে — বিস্তারিতভাবে লিখুন।

উদাহরণ (Logo Design):

  • Basic: 1 simple logo - $10 - 2 days
  • Standard: 2 concepts + 2 revisions - $30 - 3 days
  • Premium: 3 premium logos + source file - $60 - 2 days

গিগ ডেসক্রিপশন লিখুন (Description & FAQ)

এটি গিগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনার সার্ভিসের বিস্তারিত বর্ণনা দিন।

কী লিখবেন:

  • আপনি কী সার্ভিস দিবেন?
  • ক্লায়েন্ট কেন আপনাকে বেছে নেবে?
  • কীভাবে কাজ করবেন?
  • কোন ফাইল ফরম্যাটে দিবেন?
  • কাস্টমার সাপোর্ট দিবেন কিনা?
  • উদাহরণ ডেসক্রিপশন শুরু:
  • এরপর FAQ অংশে ক্লায়েন্টদের সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর যুক্ত করুন।

রিকোয়ারমেন্ট যুক্ত করুন (Requirements)

ক্লায়েন্ট কাজের অর্ডার দেওয়ার পর কী তথ্য দিবে — সেটা এখানে লিখুন।

উদাহরণ:

  • আপনার কোম্পানির নাম
  • পছন্দের রঙ বা ডিজাইন স্টাইল
  • আপনার ওয়েবসাইট (যদি থাকে)
  • এটি লিখলে আপনি কাজ শুরু করার আগে প্রয়োজনীয় সব তথ্য পেয়ে যাবেন।

গিগ ইমেজ ও ভিডিও যুক্ত করুন (Gallery)

একটি ভালো গিগ ইমেজ বা ভিডিও অনেক বেশি ক্লায়েন্ট আকর্ষণ করে।

ইমেজ আপলোড করার নিয়ম:

  • JPG/PNG ফরম্যাটে
  • সর্বনিম্ন 550px x 370px
  • আপনার করা কাজের নমুনা দিন
  • কোনো কপিরাইটযুক্ত ছবি ব্যবহার করবেন না

ভিডিও:

  • নিজের পরিচয়সহ 30-60 সেকেন্ডের ভিডিও বানান
  • ভিডিওতে আপনার সার্ভিসের মূল্য ও গুণমান ব্যাখ্যা করুন

গিগ পাবলিশ করুন

  • সবকিছু ঠিকঠাক দিলে নিচে “Publish Gig” বাটনে ক্লিক করুন।
  • অভিনন্দন! 
  • এখন আপনার গিগ অনলাইনে চলে গেছে, এবং যে কেউ তা দেখতে পারবে।

সফল গিগ তৈরির টিপস

কীওয়ার্ড রিসার্চ করুন

ফাইভারে সার্চ করে দেখুন কোন গিগগুলো বেশি জনপ্রিয়, কী কী শব্দ ব্যবহার করছে, সেই অনুযায়ী আপনার গিগের টাইটেল, ট্যাগ ও ডেসক্রিপশন তৈরি করুন।

গিগ SEO অনুসরণ করুন

আপনার গিগের টাইটেল, ডেসক্রিপশন এবং ট্যাগে অবশ্যই প্রাসঙ্গিক কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন — যেন Fiverr সার্চে আপনার গিগ শীর্ষে আসে।

ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করুন

একটি আকর্ষণীয় থাম্বনেইল ও ভিডিও যুক্ত গিগ বেশি ক্লায়েন্ট পায়। যদি সম্ভব হয়, নিজের কণ্ঠে ভিডিও বানান — এতে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।

গিগ নিয়মিত আপডেট করুন

সময়-সময় গিগের ডেসক্রিপশন, প্যাকেজ বা প্রাইস পরিবর্তন করে আপডেট করুন। এতে ফাইভার বুঝবে আপনি অ্যাকটিভ।

মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করুন

Fiverr অ্যাপ ব্যবহার করে দ্রুত ক্লায়েন্টের মেসেজের উত্তর দিন, যাতে আপনার রেসপন্স টাইম ভালো থাকে।

গিগ প্রকাশের পর কী করবেন?

  • Fiverr Forum-এ অ্যাক্টিভ থাকুন
  • ক্লায়েন্টদের সঙ্গে দ্রুত এবং পেশাদারভাবে যোগাযোগ করুন
  • কাজের মান বজায় রাখুন, deadline মিস করবেন না

উপসংহার

ফাইভারে গিগ তৈরি করা মানে হলো — আপনি আপনার সেবা বা দক্ষতাকে সঠিকভাবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করছেন। একটি ভালো গিগ আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারকে বদলে দিতে পারে। তাই গিগ তৈরি করার সময় পেশাদার মনোভাব, সময় এবং কৌশল ব্যবহার করুন।

সঠিক টাইটেল, আকর্ষণীয় ছবি, পরিষ্কার বিবরণ, নির্ভুল দাম — এসবই মিলিয়ে একটি সফল গিগ গড়ে ওঠে। আপনি যদি নিয়মিত গিগ অপ্টিমাইজ করেন এবং ক্লায়েন্টদের সন্তুষ্ট রাখেন, তবে অল্প সময়েই আপনি ফাইভারে একজন সফল সেলার হয়ে উঠতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url