জুমার দিনের ফজিলত ও গুরুত্ব।

ইসলামী জীবনে শুক্রবার অর্থাৎ জুমার দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র একটি দিন। মুসলিম উম্মাহর জন্য এই দিনটির রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য এবং তা নিয়মিত পবিত্রতা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে বরকত লাভের এক মাধ্যম। 

জুমার দিনের ফজিলত ও গুরুত্ব।জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত কী?জুম্মা মোবারক দিনের ফজিলত কী?জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ৫টি আমল কী কী?জুমার দিনের এত গুরুত্ব কেন?জুমার দিনে কি সূরা পড়তে হয়?জুমার দিনের সুন্নত কি কি?জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত কী?জুম্মা মোবারক দিনের ফজিলত কী?জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ৫টি আমল কী কী?জুমার দিনের এত গুরুত্ব কেন?জুমার দিনে কি সূরা পড়তে হয়?জুমার দিনের সুন্নত কি কি?জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত কী?জুম্মা মোবারক দিনের ফজিলত কী?জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ৫টি আমল কী কী?জুমার দিনের এত গুরুত্ব কেন?জুমার দিনে কি সূরা পড়তে হয়?জুমার দিনের সুন্নত কি কি?

কোরআন ও হাদিসে জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তৃত নির্দেশনা রয়েছে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সম্ভব।

জুমার দিনের পরিচয় ও তাৎপর্য

‘জুমা’ শব্দটির অর্থ হলো ‘জমায়েত’ বা ‘একত্রিত হওয়া’। জুমার দিন মুসলিম সম্প্রদায় ইবাদত ও আধ্যাত্মিকতার জন্য একত্রিত হয়। এই দিনটি মুসলমানদের জন্য সপ্তাহের সবচেয়ে বড় পবিত্র দিন, যেখানে তারা পবিত্র মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে।

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

"হে যারা ঈমান এনেছো! যখন জুমার নামাজের জন্য আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থগিত রেখো এবং আল্লাহর ইবাদতে একত্রিত হও।" (সূরা জুমা, আয়াত ৯)

এই আয়াত থেকেই বোঝা যায়, জুমার দিন আল্লাহর ইবাদতে সময় দেয়া কতটা জরুরি।
জুমার দিনের ফজিলত

আল্লাহর পবিত্র দিন হিসেবে ঘোষণাঃ

জুমার দিন মুসলিমদের জন্য বিশেষ একটি দিন। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন,
“শুক্রবার ঈমানদারদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দিন। সেই দিনে আদম (আ.) সৃষ্টি হয়, সেই দিনেই তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন এবং সেই দিনেই তার মৃত্যু হয়।” (সুনানে আবু দাউদ)

জুমার নামাজের গুরুত্বঃ

জুমার নামাজ অপরাহ্নের অন্যতম ফরজ ইবাদত। এটি একসঙ্গে মুসলিমদের ইবাদত ও সামাজিক মিলনের সুযোগ। জুমার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে গুনাহ ক্ষমা ও নেক আমল বৃদ্ধি পায়।

দু‘আ মাকরূহ নয়, বরং বিশেষ সময়ঃ

জুমার দিনে যেই সময় আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য বিশেষ অনুগ্রহ রয়েছে, তা হলো ‘আসরের আগ পর্যন্ত সময়’। নবী (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি জুমার দিনের পর থেকে আসরের পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর কাছে কোনো জিজ্ঞাসা করে, আল্লাহ তাকে অবশ্যই তার প্রার্থনা পূরণ করবেন।” (মুসলিম)

জুমার দিনে বিশেষ আমল ও সুন্নতসমূহ

গোসল ও সুগন্ধি ব্যবহার

জুমার দিনে গোসল করা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা বিশেষ Sunnah। নবী (সা.) বলেছেন:
“জুমার দিনে গোসল করা মুমিনের জন্য ওয়াজিব।” (মুসনাদ আহমাদ)

আগমন ও আগাম নামাজ আদায়

মসজিদে আগে পৌঁছে ইমাম ও মুসলিমদের সঙ্গে একত্রিত হওয়া সুন্নাত। এই সময় মোনাজাত, কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া পাঠ করা উত্তম।

কুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা

জুমার নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো খুতবা শুনা। মুসলিমরা এদিন খুতবা শোনার মাধ্যমে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে। নবী (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি খুতবা শুনতে মনোযোগ দেয়, আল্লাহ তাকে মাফ করবেন।” (মুসলিম)

আল্লাহর নামে তাসবিহ ও দোয়া

জুমার দিনে বেশি বেশি তাসবিহ ও দোয়া করার আদেশ আছে। বিশেষত, সূরা কাহফ পড়া সুন্নত।

জুমার দিনের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি

জুমার নামাজ মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত করে সামাজিক বন্ধনকে শক্তিশালী করে। বিভিন্ন বয়স, জাতি ও সমাজের মানুষ একই মসজিদে এসে আল্লাহর নাম স্মরণ করেন।

আত্মশুদ্ধির দিন

জুমার দিন নিজেকে পর্যালোচনা ও ভুল সংশোধনের সময়। গুনাহ থেকে তওবা করে জীবনকে নবায়ন করার সুযোগ। এটি আত্মার জন্য এক প্রশান্তি ও পূর্ণতা।

ঈমানের পুনরুজ্জীবন

সপ্তাহে একদিন বিশেষভাবে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে ইবাদত করার মাধ্যমে ঈমানের দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়।

জুমার দিনের সূরা কাহফ পাঠের গুরুত্ব

জুমার দিনে সূরা কাহফ পড়া মুসলিমদের জন্য সুন্নত এবং এতে রয়েছে বিভিন্ন ফজিলত। নবী (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ পাঠ করে, আল্লাহ তার সামনের দিক থেকে আলো প্রদান করবেন যতদিন পরবর্তী জুমা আসে।” (হাকিম)

এতে জীবনের পরীক্ষা, দুনিয়ার প্রতিকূলতা থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের বার্তা রয়েছে।

জুমার দিনে বিশেষ দোয়া ও ইবাদত

দোয়া কবুল হওয়ার সময়

জুমার দিন বিশেষ একটি সময় রয়েছে যখন আল্লাহ তাওয়ালা দোয়া কবুল করেন। মুসলিমরা এই সময় দোয়া করার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করে।

কুরআন পাঠ ও জিকির

জুমার দিনে বেশি বেশি কোরআন পাঠ করা ও জিকিরে মনোনিবেশ করা উত্তম। এটি মনকে প্রশান্তি দেয় ও আল্লাহর নৈকট্য বর্ধিত করে।

জুমার দিনের কিছু নিষেধাজ্ঞা

  • জুমার দিন অকারণ ব্যবসা-বাণিজ্য করা নিষেধ, কারণ এদিন আল্লাহর ইবাদতে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ।
  • খুতবা চলাকালীন গপ্পো করা, খেলাধুলা বা অন্য কাজ করা ফজিলত নষ্ট করে।
  • আসরের পর দ্রুত মসজিদ ত্যাগ করা ইসলামে পছন্দনীয় নয়।

উপসংহার

জুমার দিন মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ তৌফিক ও বরকতের দিন। আল্লাহ এই দিনে তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়া বর্ষণ করেন এবং ঈমানদাররা এই দিনে বেশি বেশি ইবাদত ও দোয়া করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ পায়। পবিত্র কোরআন ও নবী করীম (সা.) এর সুন্নত মেনে চলার মাধ্যমে আমরা জুমার ফজিলত অর্জন করতে পারি। তাই প্রতি শুক্রবার আমাদের উচিত গোসল করে মসজিদে যাওয়া, খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন থাকা।

সর্বোপরি, জুমার দিনে আত্মশুদ্ধি ও নতুন উদ্দীপনায় জীবনকে সাজানো যেন আমাদের রোজকার কাজেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url