বাংলাদেশে কোন ঋতুতে গম চাষ করা হয় | গমের ফলন বৃদ্ধি করার উপায় ।

আসসালামু আলাইকুম, সম্মানিত চাষী ভাইরা। আপনারা সবাই জানেন যে গম একটি উৎপাদনশীল অর্থকারী ফসল, যা মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গম ব্যাপক ভাবে উৎপাদন হয়ে আসছে । আজকে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে, আপনি গম কিভাবে উৎপাদন করবেন. কতটুকু তার পরিচর্যা করবেন, কোন সময় তার পরিচর্যা করবেন, গমে সার প্রয়োগ পদ্ধতি।
কিভাবে গমের পরিচর্যা করতে হয়কিভাবে গমের ভালো চারা বাছাই করা হয়কোন ফসলের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয় class 7বাংলাদেশে কোন ঋতুতে গম চাষ করা হয়গমের ফলন বৃদ্ধি করার উপায়গাছের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয়বারি গম ৩৩ চাষ পদ্ধতিগম কাটার সময়বিঘা প্রতি গমের ফলনবারি গম ৩৩ এর ফলনগম চাষ পদ্ধতি pdfভুট্টার ফলনবারি গম ৩০ এর ফলনগম চাষে সার প্রয়োগবিঘা প্রতি গমের বীজকিভাবে গমের পরিচর্যা করতে হয়


গম জমিতে ছিটানো থেকে শুরু করে, গম জমি থেকে তোলা পর্যন্ত এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পেরে যাবেন। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে গম কিভাবে উৎপাদন করব এবং সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক

গম চাষের পুস্টটি মূল্য নির্ধারণঃ গম হতে যে আঁটা হয় তার প্রতি ১00 গ্রাম আটায় আমিষ ১ গ্রাম, শর্করা ৬৯.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৮ মিলিগ্রাম, লৌহ ১১.৫ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৯ মাইক্রগ্রাম, ভিটামিন বি ১-০.৪৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ২-০.৪৯ মিলিগ্রাম, ১.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ২.৭ গ্রাম এবং জলীয় অংশ থাকে ১২.২ গ্রাম।

আরো পড়ুন,

ভেষজ গুণাবলীঃ

গম সাধারণত মানুষের রুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গমের খড় গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

গম চাছে জমি ও মাটি নির্বাচনঃ গম চাষের জন্য মাঝারি দোয়াস মাটি বেশি উপযুক্ত বলে ধরা হয়। লোনা মাটিতে গম ফলন কম হয় যা কিনা দোয়াশ মাটির তুলনায় অনেকটাই কম।

গমের জাত পরিচিতিঃ বর্তমানে এ দেশে অধিক আবাদকৃত গম জাতের মধ্যে কাঞ্চন, আকবর, অগ্রণী ও প্রতিভা এ সব চাষ হয়ে থাকে। তাছাড়া সৌরভ বারি গম ১৯ ও গৌরব বারি গম ২০ নামে দুটি উচ্চফলনশীল নতুন জাত অনুমোদিত রয়েছে।

কাঞ্চন গমঃ গমের জাত হিসেবে কাঞ্চন বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক অনুমোদিত এবং এর মধ্যে সংস্কারায়ন করে কাঞ্চনজাত উদ্বোধন করা হয়েছে। এ জাত ১৯৮৩ সালে অনূদিত হয়। গমের উচ্চতা ৯০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার উচ্চতা হয়ে থাকে। খুশির সংখ্যা ৬ থেকে ৭ পর্যন্ত হয়। গাছের নিশানা পাতা খাড়া এবং শিশ বের হতে ৬০ থেকে ৬৮ দিন সময় লাগে। 

জ্যোতিষীসের মতে ৩৫ থেকে ৪০ টি দানাও থাকে। দানা সাদা এবং হাজার দানার ওজন ৪৮ থেকে ৫২ গ্রাম পর্যন্ত হয়। অন্যান্য যাতে তুলনায় দানা আকারে বড় হয়ে থাকে। চারা অবস্থায় প্রাথমিক ভাবে মাটির উপরে অবস্থান করে যা ভুনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৬ এবং ১১২ দিন সময় লাগতে পারে। এই জাতটি দীর্ঘ সময় ধরে চাষাবাদ হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। 

বর্তমানে পাতার মরিচার দাগ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় জাতটির ফলন কিছুটা হাস্য পেয়েছে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টর প্রতি সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার টন ফলন পাওয়া যায়। এই জাতটি দেশের সকল অঞ্চলে চাষের জন্য উপযোগী হয়ে গড়ে উঠেছে যা বর্তমানে সারা দেশে কাঞ্চন গম খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশের প্রায় ৮০ ভাগ এলাকায় কাঞ্চন গমের আবাদ হচ্ছে।

আকবর গমঃ আন্তর্জাতিক ভোটটা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র মেক্সিকোতে ও টোবারি নামক দুটি জাতের মধ্যে সংস্ক্রায়নের পর একটি কৌলিক সারি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। পরবর্তীতে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত জাতি আকবর নামে ১৯৮৩ সালে অনুমোদিত হয়। এই জাতের গম গাছের উচ্চতা ৮৫ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। কুশির সংখ্যা সাত থেকে আটটি হয়ে থাকে। পাতা কিছুটা হেলানো সংখ্যা নিশানা পাতা খুবই চওড়া ও লম্বা হয়ে থাকে।

এই জাতের গমে শিশ বের হতে ৫০ থেকে ৫৫ দিন সময় লাগে। জ্যোতিষিদের মতে ৫০ থেকে ৫৫ টি দানা থাকে। দানা সাদা ও আকারে মাঝারি এবং হাজার দানার ওজন প্রায় ৩৭ থেকে ৪২ গ্রাম হয়ে থাকে। ফসল ভুনা থেকে কাটা পর্যন্ত ১০৩থেকে ১০৮ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার টন গম উৎপাদন হয়।

এই জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং বৃহত্তম ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলায় এ জাতের ফলন বেশি হয়। তবে আকবর জাতের গম দেশে অন্যান্য অঞ্চলেও চাষের জন্য উপযোগী বলে বিবেচিত করা হয়েছে।

অগ্রণী জাতঃ গমে আন্তর্জাতিক ভোটটা ও উন্নয়নের কেন্দ্র মেক্সিকো হতে সনরা পি ৪১৬০ কে নিয়া কৌলিক সারি ১৯৮২ সালে বাছাই করন নার্সারির মাধ্যমে বাংলাদেশে আনা হয়। ১৯৮৭ সালে অগ্রণী নামায় তা অনুমোদন লাভ করে। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৮৫ থেকে ৯১ সেন্টিমিটার এবং খুশির সংখ্যা ৫ থেকে ৬ টি। কিছুটা হেলানো নিশান পাতা বড়।

গাছের পাতা ও কান্ডের পাতলা মোমের আবরণের মতো বস্তু লক্ষ্য করা যায়। শেষ বের হতে ৫৫ থেকে ৬০ দিন সময় লেগে যেতে পারে। দানার রং সাদা আকারের মাঝারি এবং হাজার দানার ওজন ৩৮ থেকে ৪২ গ্রাম পর্যন্ত হয়। পাতার গোড়ার বেগুনি ও অরিকল থাকে। গোনা থেকে পাতা পর্যন্ত ১০৩ থেকে ১১০ দিন সময় লেগে যেতে পারে। 

উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে গমের ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে তিন থেকে সাড়ে ৪ টন পর্যন্ত হয়। যাত্রী পাতার দাগ ব্লাইড রোগ সহনশীল দেরিতে বাপনের জন্য অগ্রণী জাতের গম বিশেষভাবে উপযোগী।

প্রতিভা গমঃ প্রতিভা গম থাইল্যান্ড হতে ১৯৮২ সালে পেরিতে বাছাই করন নার্সারিতে কে ইউ ১২ নামক একটি কৌলিক সারি বাংলাদেশের বাছাই করা হয় এবং ১৯৮৩ সালে তা প্রতিভা নামে অনুমোদন করা হয়। গাছের উচ্চতা ৮৫ থেকে ৯৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। কুসির সংখ্যা ছয় থেকে সাতটি এবং গাছের নিশান পাতা খাড়া হয়ে থাকে। শিশ বের হতে ৬০ থেকে ৭০ দিন সময় লেগে যেতে পারে। শিষ লম্বা ও প্রতি সিসের আকার অনুযায়ি ৩৫ থেকে ৪৫ টি দানা থাকে।

দানা সাদা আকারে বড় ও হাজার দানার ৪২ থেকে ৪৮ গ্রাম পর্যন্ত হয়। ফসল বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৫ থেকে ১১০ দিন সময় লেগে যেতে পারে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি হেক্টর সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার টন ফলন পাওয়া যেতে পারে। প্রতিভা জাতটি পাতার মরিচা ও পাতার দাগ রোগ সহনশীল। প্রতিভা জাতের গম দেশের সকল অঞ্চলে চাষ করা হয়ে থাকে।

সৌরভ জাতঃ আন্তর্জাতিক ভুট্টা এবং গম উন্নয়ন কেন্দ্রে নিকোযারী ও ভেরি জাতের মধ্যে সংস্কারঙ্ককৃত একটি কৌলিক সারি ১৯৮৯ সালে এ দেশে এনে বাছাই করা হয় যা ১৯৯৮ সালের সৌরভ বারি ১৯ নামে চাষাবাদের জন্য অনুমোদিত হয়। গাছের উচ্চতা ৯০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। খুশির সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয়টি এবং পাতা চওড়া হেলানো ও গাঢ় সবুজ হয়ে থাকে। নিশানা পাতার নিচে তলে মোমের মত পাতলা আবরণ থাকে।

কান্ড মোটা ও শক্ত ঝড়বৃষ্টিতে হেলে পড়েনা। গমের ঠোঁট বড় প্রায় পাঁচ মিলিমিটার পর্যন্ত হয় এবং শিষ বের হতে ৬০ থেকে ৭০ দিন সময় লেগে যেতে পারে। শীষ লম্বাকৃতি প্রতিটি শীষের দানার সংখ্যা ৪২ থেকে ৪৮ টি শীষ লম্বা দানাদার রং সাদা এবং হাজার দানার ওজন ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম।

গম থেকে পাকা পর্যন্ত ১২০ থেকে ১২৫ দিন সময় লাগতে পারে। উন্নত পদ্ধতিতে আবাদ করলে হেক্টর প্রতি ফলন ৩.৫ থেকে ৪.৫ টন ফলন পাওয়া যায়। এই জাতটি পাতার দাগ রোগ প্রতিরোধ। সৌরভ গম দেশের প্রায়ই সকল অঞ্চলে চাষের জন্য উপযোগী হিসেবে ধরা হয়।

গৌরব বারি গম ২০ঃ আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্রে টুরাকো ও চিলেরো জাতের মধ্যে সংকরায়নকৃত একটি কৌলিক শারি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের আনা হয়ে থাকে। খুব উৎপাদনশীল জাত হিসেবে বাছাই করা হয় যা ১৯৯৮ সালে গৌরব বারি গম ২০ নামে সারাদেশে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন করা হয়। গাছের উচ্চতা ৯০ থেকে ১০২ সেন্টিমিটার ও কুশি পাঁচ থেকে ছয়টি।

পাতা গাঢ় সবুজ এবং পাতা খাড়ো সরু ঈশ্বত মোড়ানো। নিচের ঠোঁট ছোটো প্রায় দুই মিলিমিটার এবং শিষ বের হতে ৬০ থেকে ৬৫ দিন সময় লাগে। শিষ লম্বা অগ্রভাগ সরু প্রতি শিষে ৩৫ থেকে ৫০ টি দানা হয়ে থাকে। এই গমে দানার ওজন ৪০ থেকে ৪৮ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এবং গমের জীবনকাল ১০০ থেকে ১০৮ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে এই গম চাষ করলে হেক্টর প্রতি ৩.৫-৪.৫ টোন ফলন পাওয়া যায়।

জাতটি পাতার মরিচার রোগ প্রতিরোধ এবং পাতার দাগ রোগ সহনশীল হয়ে থাকে। এ জাতটি তাপ সহিন্চু তাই দেরিতে বপন করলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। বর্তমানে জাত সমূহের তুলনায় এই জাত ১০ থেকে ১২ ভাগ বেশি ফলন দেয়।

বাপনের সময়ঃ গাছের উচ্চ ফলনশীল জাত সমূহে বপনের উপযুক্ত সময় হল কার্তিক মাসের শেষ থেকে অগ্রহায়ণ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে অর্থাৎ নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। যেসব এলাকায় ধান কাটতে ও জমি তৈরি করতে বিলম্ব হয় সেই ক্ষেত্রে কাঞ্চন আকবর অগ্রণী ও প্রতিভা গৌরব বপন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

গম বাপনের পদ্ধতির সমূহঃ

গম বাপনের পদ্ধতি হল প্রতি শারিতে বা ছিটিয়ে গম গোপন করা যায়। গম বাপনের জন্য জমি তৈরির পর লাঙ্গল দিয়ে নানা তৈরি করে 20 সেন্টিমিটার দূরত্বে চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ ছিটালে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

সার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিঃ

শেষ চাষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ইউরিয়া সারের দুই-তৃতীয়াংশ এবং টিএসপি এমওপি ও জিপসাম শেষ চাষের পূর্বেই প্রয়োগ করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি এর তৃতীয়াংশ ইউরিয়া, প্রথম সেচের সময় উপরে প্রয়োগ করতে হবে এবং সেচ ছাড়া চাষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সার অর্থাৎ ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি এবং জিপসাম শেষ চাষে সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। গম চাষের নিচে উল্লেখিত হারে সার ব্যবহার করা প্রয়োজন।

নিচে কিছু সারের নাম সহ পরিমান উল্লেখ করা হলোঃ
  • ইউরিয়া ৭২৯ থেকে ৮৯১ গ্রাম বা ৫৬৭ থেকে ৭২৯ গ্রাম, ১৮০ থেকে ২২০ কেজি, ১৪০ থেকে ১৮০ কেজি।
  • টিএসপি ৫৬৭ থেকে ৭২৯ গ্রাম, ১৪০ থেকে ১৮০ কেজি।
  • এমওপি ১৬২ থেকে ২০৫ গ্রাম যা ৪০ থেকে ৫০ কেজি।
  • জিপসাম ৪৫০ থেকে ৪৯০ গ্রাম যা ১১০ থেকে ১২৫ কেজি।
  • গোবর বা কম্পোস্ট সার ২৮ থেকে ৪০ কেজি।

সেচ ও আগাছা দমন ব্যবস্থাপনাঃ

মাটির প্রকারভেদে সাধারণত দুই থেকে তিনটি সেচের প্রয়োজন হয়ে থাকে। প্রথম সেচ চারা গজাবার তিন পাতার সময় অর্থাৎ বপনের ১৭ থেকে ২০ দিন পরে, দ্বিতীয় সেচ গমের সিস বের হওয়ার সময় অর্থাৎ বপনের ৫৫ থেকে ৬০ দিন পর। বপনের ৭৫ থেকে ৮০ দিন পর দিতে হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে সাথে সাথে আগাছা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

পোকামাকড় দমন ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিঃ

গমের পাতা মরিচার রোগ দমনঃ পাকসনিয়া নমক ছত্রাক এর আক্রমণ এ রোগ বিশেষ করে হয়ে থাকে। প্রথমে পাতার ওপর ছোট গোলাকার দাগ পড়ে যায় এবং শেষ পর্যায়ে দাগ মরিচার মতো বাদামি বা কালচে রঙে পরিণত হয়। হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা ঘষা দিলে লালচে মরিচার মতো গুঁড়া হয়ে যায়। এরকম লক্ষণ প্রথম কান্ডে দেখা যায় এবং সব পাতায় ও কাণ্ডে ধীরে ধীরে হতে থাকে। বিশেষ করে দেশের উত্তর অঞ্চলে এ রোগ বেশির ভাগ দেখা দিয়ে থাকে।

রোগ বালাই দমন ও প্রতিকার সমুহুঃ

রোগ প্রতিরোধী গমে জাত কাঞ্চন, আকবর, অগ্রণী, প্রতিভা, সৌরভ, গৌরবের চাষ করতে হবে। সুষম হারে সার প্রয়োগ করতে হবে। টিল্ট ২৫০ ইসি ছত্রাকনাশক জিরো ০.৪% ১ মিলি আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২ থেকে ১৫ দিন পর পর দুই থেকে তিন বার স্প্রে করতে হবে।

গমের পাতার দাগ রোগ দমনঃ বায়ু পারছিস সরোকিনিয়ানা নামক ছত্রাক এ রোগ ঘটাতে বিশেষ করে সহায়তা করে। গাছ মাটির উপরে আছে প্রথমে নিচে পাতাতে ছোট ছোট বাদামি ডিম্বাকার দাগ পড়ে যায়। পরবর্তী দাগ সমূহ আকারে বড় হয়ে বাড়তে থাকে এবং গমের পাতা ঝলসে যেতে পারে। রোগের জীবাণু বীজের কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশ বেঁচে থাকতে পারে। বাতাসের অধিক আর্দ্রতা এবং উচ্চ তাপমাত্রা যেমন ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এ রোগ বিস্তারের জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

রোগ দমন ও প্রতিকার সমুহুঃ

রোগমুক্ত জমিতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
  • গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে, যাতে পরবর্তীতে আর এই রোগ না বাড়তে পারে।
  • প্রতি কেজি গম বীজে দুই থেকে তিন গ্রাম ভিটাভেকস ২০০ মিসিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
  • টিল্ট ২৫০ ইসি ছত্রাকনাশক ০.৪%, ১ মিলি ২.৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২ থেকে ১৫ দিন পর পর দুই থেকে তিন বার স্প্রে করতে হবে।

গমের গোড়া পচার রোগ সমুহুঃ

গমের গোড়া পচা রোগ দমন স্কেলোরোসিয়াম ট্রলসিন নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ বিস্তার লাভ করে। এ রোগের ফলে মাটির সমতলে গাছের গোড়ায় হলুদের দাগ দেখা যায় এবং পরে তা গাঢ় বাদামী বর্ণ ধারণ করে। আক্রান্ত স্থানের চারদিকে ঘিরে ফেলে। পরবর্তীতে পাতা শুকিয়ে মারা যায় এবং রোগের জীবাণু মাটিতে কিংবা ফসলের পরিত্য অংশে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে। সাধারণত বৃষ্টির পানি বা সেচের পানি দ্বারা এক জমি হতে অন্য জমিতে বিস্তার লাভ করতে পারে।

রোগ বালাই দমন ও প্রতিকার সমুহুঃ

রোগ প্রতিরোধ বাহি কাঞ্চন, আকবর, অগ্রণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরব জাত চাষ করলে বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
মাটিতে সব সময় পরিমিত আদ্রতা থাকা প্রয়োজনীয়।
ভিটাবেক্স ২০০ নামক ওষুধ প্রতি কেজি বীজে দুই থেকে তিন গ্রাম হারে মিশিয়ে সংশোধন করে নিতে হবে।

গমের আলগা ঝুল রোগ দমনঃ

আসটিলেগো, ট্রিটিসি নামক ছত্রাকের আক্রমণের এই রোগ হয়ে থাকে। গমের সিষ বের হওয়ার সময় এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। উক্ত ছত্রাকের আক্রমণের ফলে গমে সিষ প্রথম দিকে পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। পরে তা ফেটে যায় এবং দেখতে কালো ঝুলের মতো দেখায়। ছাত্রকের বীজকনা সহজে বাতাসের মাধ্যমে অন্যান্য গাছে এবং অন্যান্য জমিতে গম গাছের সংক্রমিত হয়। রোগের জীবাণু বীজের ভ্রনে জীবিত হয়ে থাকে এবং পরবর্তী বছর আক্রান্ত বীজ জমিতে বুনলে বীজের অঙ্কুরোদগমের সময় জীবাণু ও সক্রিয় হয়ে ওঠে।

রোগবালায় দমন ও প্রতিকারঃ

রোগ প্রতিরোদ বাহি কাঞ্চন, আকবর, অগ্রণী, প্রতিভা, সৌর ভ, গৌরব জাতির গম চাষ করতে হবে। রোগমুক্ত জমিতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।টিলট ২৫০ ইসি ছত্রাকনাশক ০.৪%, ১ মিলি আড়াই লিটার পানিতে মিশে ১২ থেকে১৫ দিন পর পর দুই থেকে তিন বার স্প্রে করতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ চৈত্র মাসের প্রথম থেকে মধ্য চৈত্র অর্থাৎ মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম পর্যন্ত গম কেটে সংগ্রহ করা হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url