হাইব্রিড মরিচ চাষ পদ্ধতি | উচ্চ ফলনশীল মরিচের জাত | মরিচ চাষের উপযুক্ত সময়।

আসসালামু আলাইকুম, সম্মানিত কৃষি খামারি ভাই ও বোনেরা, আপনারা আমার এই পোষ্টের টাইটেল দেখেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে কি লিখতে চলেছি। আপনি হয়তো অবগত আছেন যে মরিচ চাষে তেমন একটা জটিলতা হতে হয় না। সামান্য কিছু পরিচর্যার মাধ্যমেই মরিচ অধিকারী ফলন বৃদ্ধি করে থাকে। মরিচের যেমনটি পরিচর্যার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় সেই রকম করে গাছের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়।
বিজলী প্লাস মরিচ চাষ পদ্ধতিবর্ষাকালীন মরিচ চাষF1 হাইব্রিড মরিচহাইব্রিড মরিচ বীজমালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষহট মাস্টার মরিচউচ্চ ফলনশীল মরিচের জাতউন্নত জাতের মরিচহাইব্রিড মরিচের জাতবর্ষাকালীন মরিচ চাষবিজলী প্লাস মরিচ চাষ পদ্ধতিহাইব্রিড মরিচ চাষ পদ্ধতিমরিচের জাতের নামশীতকালীন মরিচ চাষমরিচ চাষের উপযুক্ত সময়বারি মরিচ ১হাইব্রিড মরিচ চাষ পদ্ধতিগ্রীষ্মকালীন মরিচ চাষবর্ষাকালীন মরিচ চাষবিজলী প্লাস মরিচ চাষ পদ্ধতিটবে মরিচ চাষ পদ্ধতিমালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষশীতকালীন মরিচ চাষমরিচ গাছের পরিচর্যা

আপনি যদি ভেবে থাকেন যে মরিচ চাষ করে লাভবান হবেন তাহলে সিদ্ধান্ত আপনার। আমি শুধু এই পোষ্টের মাধ্যমে বা লিখালির মাধ্যমে আপনাকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিব মাত্র। তো চলুন আর বেশি কথা বলবো না এবার মূল আলোচনায় ফিরে যাব।

মরিচের পুষ্টি মূল্যঃ মরিচের পুষ্টি মূল্য শুকনো মরিচে আমিষ, প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি থাকে।

আরো পড়ুন,

ভেষজ গুণাবলীঃ- নিয়মিতভাবে কাঁচামরিচ খেলে মুখে ঘা হয় না।

ব্যবহার বিধিমালাঃ- রান্নাবান্না ও মুখো চোখ খাবার তৈরিতে মরিচ বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরি উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। অনেকে মরিচের আচার ও করে থাকেন।

উপযুক্ত জমি ও মাটি নির্বাচন করাঃ- প্রচুর আলো বাতাস এবং পানি সেচ ও বিকাশের ব্যবস্থা আছে এমন দশ মাটি মরিচের জন্য বেশ উপযোগী এবং এতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

মরিচের জাত পরিচিতিঃ-  ঝাল ও মিষ্টি এ ধরনের মরিচ দেখা যায়। ঝাল মরিচের মধ্যে বগুড়া, চাঁদপুরী, ফরিদপুরী, উল্লেখযোগ্য বলে ধরা হয়। এছাড়া কামরাঙ্গা, আকালি ও কালো মরিচ খুব ঝাল হয়ে থাকে।

মরিচের চারা তৈরিতে ভূমিকাঃ

মরিচের চারা তৈরির জন্য জমি ভালোভাবে চাষ সময় দিয়ে এবং আগাছা বাছাই করে তিন বাই এক মিটার আকারে বীজ তলা তৈরি করে সেখানে বীজ বহন করা হয়। শীতকালের জন্য ভাদ্র আশ্বিন মাসে ও বর্ষা মৌসুমীর জন্য ফাল্গুন এবং চৈত্র মাসের ২০ তলায় বীজ বপন করা যেতে পারে। চারা১০ সেন্টিমিটার উঁচু হলে রোপনের বেশ উপযোগী বলে ধরা হয়।

চারা রতন পদ্ধতিঃ-  জমির আগাছা পরিষ্কার করে চার থেকে পাঁচটি চাষ ও মুরগি জমি প্রস্তুত করার পর চারা রোপণ করা যেতে পারে বা করা হয়। চারা রোপনের প্রতি শারি থেকে শারির দূরত্ব 60 থেকে 70 cm এবং চারা থেকে চারা দূরত্ব ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার। যারা বিকেলে লাগাতে হবে এবং দুই থেকে তিন দিন সকালে বিকেলে পানি দিতে হবে।

মরিচের গাছে সার প্রয়োগ ব্যবস্থাপনাঃ- মরিচের গাছে সার ব্যবস্থাপনার জন্য জমিতে প্রতি হেক্টরে গোবর ১০ টন, ইউরিয়া ২৫০ কেজি, টিএসপি ২০০কেজি, এবং এমওপি স্যার ১৫০ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরীর সময় সমুদয় গবর টিএসপি 50 কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। যারা রোপনের ২৫ দিন পর ৮৫ কেজি ইউরিয়া ও ৩৫ কেজি এমওপি সার প্রথম উপরি প্রয়োগ করতে হবে। লাগানোর ৫০ দিন পর দ্বিতীয় তথা ৭০ দিন পর তৃতীয় কিস্তিতে প্রতিবারে ৮৩ কেজি উড়িয়া ও ৩৩ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ

জমিতে রসের অভাব হলে শেষ দিতে হবে এবং পানির নিক গাছের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে এবং উপরে স্যার প্রয়োগ সময় কোদাল দিয়ে বা নিড়ানি দিয়ে কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে।

পোকামাকড় নামঃ

পোকার নাম সাদামাছিঃ- সাদামাছি খুব ছোট আকারে এই পোকা পাতার রস চুষে খেয়ে ফেলতে পারে তাছাড়া এ পোকা কালো ছুটি মল্ড নামক ছত্রাক পাতায় জন্মাতে সহায়তা করে এবং ভাইরাস রোগ ছড়িয়ে দেয়।

পোকা চেনার উপায়ঃ- সাদা রংয়ের এই পোকা গাছের পাতার নিচে দিকে বসবাস করে। লম্বায় ১ মিলিমিটারের চেয়েও সামান্য বড় হয়ে থাকে। গাছের পাতা সামান্য নাড়া দিলেই উড়ে চলে যেতে পারে।

ক্ষতির নমুনাঃ
  • পাতার নিচের দিক হতে প্রাপ্তব বয়স্ক ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক পোকা পাতার রস চুষে খায় ফলে পাতা কুঁচকে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যবহৃত হয়।
  • আক্রমণে প্রথমে পাতায় সাদা বা হলদে রং দেখা যায় পরে দাগগুলো একত্র হয়ে সবুজ শিরা সহ পাতা হলদে হয়ে যায়।
  • এ পোকা খাওয়ার সময় আঠালো মিষ্টি রস নিঃসরন করে বিধায় ওই আঠাতে কালো ছত্রাক জন্মাতে সহায়তা করে।
  • এই পোকা ভাইরাস রোগ ছড়াতে বিশেষ সহায়তা প্রদান করে।
অনুকূল পরিবেশঃ-  উষ্ণ ও সূক্ষ্ম আবহাওয়া এ পোকা বিস্তারের জন্য বিশেষ সহায়ক।

পোকার জীবন চক্রঃ- এই পোকা সাধারণত পাতার নিচের দিকে অতি ক্ষুদ্র সাদা ডিম পাড়ে। ডিম পরে বাদামী রং ধারণ করে ও ৩-১৭ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে যায়। বাচ্চার রং সবুজাভ সাদা দুই থেকে ছয় সপ্তাহ অবস্থায় থেকে পূর্ণাঙ্গ পোকার পরিণত হয়। পূর্ণাঙ্গ পোকা 10 থেকে 15 দিন বেঁচে থাকে।

পোকা দমনে ব্যবস্থাপনাঃ- হলুদের রং এর আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিলিটার পাঁচ গ্রাম কাপড় কাঁচা সাবান মিশিয়ে স্প্রে করে দিতে হবে।

থ্রি পস পোকাঃ- এটি একটি ক্ষুদ্র পোকা এবং আক্রমণ বাহির হতে বোঝা যায় না বিধায় ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যায়। সুতরাং মাঝে মাঝে ক্ষেত পরিদর্শন করে ফসলের অবস্থা দেখে আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

পোকা চেনার উপায়ঃ- থ্রি পোস পোকা অতি ক্ষুদ্র যা খালি চোখে কোন মতেই দেখা যায়। এই পোকা পাতার রস চুষে খায় এবং অধিক আক্রমণে পাতা কুচকে যায়। এমন কি গাছ থেকে কোন ফুল ফল নাও আসতে পারে। এই পোকা ভাইরাস রোগ ছড়াতে বিশেষ সহায়তা প্রদান করে।
ক্ষতির নমুনা চিহ্নিতকরণঃ
  • বাচ্চা ও পূর্ণাঙ্গ পোকা পাতার রস চুষে খাই বলে পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং অনেকটা নৌকার মতো দেখা যায়।
  • পোকার আক্রমণে পাতা বাদামের রং ধারণ করে।
  • নতুন ও পুরাতন উভয় পাতায় আক্রমণ করে থাকে।
  • অনুকূল পরিবেশে উষ্ণ ও সূক্ষ্ম আবহাওয়া জীবন ধারণ করে থাকে।

পোকার জীবন চক্র ০১ ঃ

পূর্ণবয়স্ক পোকা ৪৫ থেকে ৫০টি ডিম পাড়ে এবং 5 থেকে 6 দিন ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়ে থাকে। বাচ্চা সাত থেকে আট দিন পর পূর্ণাঙ্গ প্রকার পরিণত হয়। পূর্ণাঙ্গ পোকা ৩১ দিন পর্যন্ত বাঁচে এবং পাতা নড়াচড়া করলে এরা উড়ে পালাতে পারে।

ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিঃ

  • সাদা রংয়ের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করা।
  • মাকোরসা এই পোকা খায় বিধায় এর সংখ্যা বাড়ানো গেলে সহজে থ্রি পরস পোকা দমন করা যায়।
জাব পোকাঃ- জাব পোকা পূর্ণাঙ্গ পাতা ফুল কচি ফল ও ডবার রস চুষে খায়। অধিক আক্রমণে গাছের বাড় বাড়তি কমে যায় ও ফলন কম হয়। এ পোকা ভাইরাস ছড়াতে বিশেষ সহায়তা প্রদান করে।

জাব বোকা চেনার উপায়ঃ- জাব পোকা অতি ছোট দেহ নরম ও উজ্জ্বল কালো রঙের হয়ে থাকে। পাখাওয়ালা জাব পোকা উড়তে পারে কিন্তু নিজ ফলক বা বা পাখা বিহীন পোকা উড়তে পারেনা। এরা দল বদ্ধ ভাবে বসবাস করে।
ক্ষতির নমুনাঃ
  • পূর্ণাঙ্গ পাতা ফুলকুচি ফল ও ডগার রস চুষে খায়।
  • পাতা কুঁকড়ে যায় গাছের বৃদ্ধি ও ফুল ফল ধারণে বাধাগ্রস্ত হয়।
  • এ পোকা থেকে নিঃস্বত মধুর রসে কালো গুটি মূল ছত্রাক জন্মায়।
  • অনুকূল পরিবেশে বাতাসের আদ্রতা বেশি ও মেঘলা আকাশ প্রভাব বিস্তার করে।

পোকার জীবন চক্র ০২ঃ

এই পোকা যৌন মিলন ছাড়াই ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ৮ থেকে ৩০ বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। বাচ্চা থাকা অবস্থায় ৫ থেকে ৮ দিন থাকে এবং পাকাবিহীন জাব পোকা ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চা দিতে সক্ষম হয়। এরা সারা বছর বংশবিস্তার করে থাকে।

ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিঃ

  • আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা।
  • লেডি বার্ড বিটলের পূর্ণাঙ্গ ও ক্রীড়া এবং সিরফিড পূর্ণাঙ্গ ও ক্রীড়া ফ্লাই এর ক্রীড়া যাব পোকা খায় বিধায় এদের শংকরন ও সংখ্যা বাড়ানো গেলে জাব পোকা অতি দ্রুত খেয়ে ফেলতে পারে।
পোকার নাম ফল ছিদ্রকারীঃ- হল ছিদ্র কারী পোকার মত নিসার চর এবং রাতের আলোতে আকৃষ্ট হয়। পোকার কিড়ার আক্রমণে মরিচ ছিদ্রযুক্ত দেখায় এবং বাজারমূল্য কমে যায়।

পোকা চেনার উপায়ঃ- মা পোকাকে সাধারণত রাত ছাড়া দেখা যায় না। কিরাকে বাচ্চা ফলের মধ্যে দেখা যায় এবং ক্রীড়া লম্বায় প্রায় 2 ইঞ্চি হয়ে থাকে। কিড়ার গায়ের রং কালছে ধূসর থেকে হালকা বাদামে এবং শরীরের উভয় পাশে লম্বালম্বি হালকা ও বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়।

ক্ষতির নমুনা সমূহঃ
  • ক্রীড়া ফলের বোটার কাছে ছিদ্র করে ভেতরের অংশ খায়।
  • একটি পোকা একাধিক ফলে আক্রমণ করতে পারে এবং ফলের ভেতর ক্রীড়ার বিষ্ঠা ও পচন দেখা যায়।
  • আক্রান্ত ফল অসময়ে পাকে।

পোকার জীবন চক্র ০৩ঃ 

মত পাতার নিচে 200 থেকে 300 টি ডিম পাড়ে। তিন থেকে চার দিনে ডিম ফুটে ক্রীড়া বের হতে পারে। ছোট ক্রীড়া একত্রে থাকে তবে বড় হলে সারা মাঠ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ক্রীড়া ১৪ থেকে ১৬ দিন পর পুত্তলিতে পরিণত হয় এবং পুর্তলি দুই থেকে তিন ইঞ্চি মাটির গভীরে থাকে। ১০ থেকে ১৫ দিন পর পত্তলী হতে পূর্ণাঙ্গ মত বের হয়। জীবন চক্র সম্পন্ন করতে ৩০ থেকে ৩৫ দিন সময় লাগে। এরা বছরে ৮ বার বংশবিস্তার করতে পারে।

ব্যবস্থাপনাঃ

  • জমি থেকে ডিম ও ক্রীড়া সংগ্রহ করে নষ্ট করা।
  • প্রতি বিঘায় ১৫ টি হারে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পুরুষ মত মেরে ফেলা।
  • প্রতি সপ্তাহে একবার করে পরজীবী পোকা যেমন ট্রাইকো গ্রামা, কাইল নিজ ব্যবহার প্রতি হেক্টরে এক গ্রাম ডিম করা।
পাতা পচা রোগঃ- চুায়ানিফোরা নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ বেশি হয়।

ক্ষতির নমুনাঃ
  • চারা ও বয়স্ক গাছের শাখা প্রশাখা পাতা ফুল ও ফল এ রোগ আক্রান্ত বেশি হয়।
  • প্রথমে পাতায় পানি ভেজা দাগ দেখা যায় এবং পরে এ দাগ বৃদ্ধি পায় ও আক্রান্ত অংশ বিবর্ণ হয়ে কালচে রং ধারণ করে ফলে পাতা দ্রুত পৌঁছে যায়।
  • অনুকূল পরিবেশে পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ গাছ মরে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা যায়।
  • উচ্চ তাপমাত্রা ও স্যাতস্যাঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ দ্রুত ছড়ায় বলে ধারণা করা হয়।
  • বায়ু আক্রান্ত অংশের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।
ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিঃ
  • ফসলে পরিত্যাক্ত অংশ নষ্ট করতে হবে।
ভূমিকাঃ- ক্ষেত্রে আক্রমণ বেশি হলে সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হয়ে যায় একারণে রোগের আক্রমণের শুরু থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url