মসুর ডাল চাষের সময় | মসুর ডালের উচ্চ ফলনশীল বীজ ।

মসুর ডালের পুষ্টি মূল্য নির্ধারণঃ- মসুরের ডালে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য শক্তি ও প্রোটিন রয়েছে।
কোন মাসে বিনা চাষে ডালের বীজ জমিতে বপন করা হয় মুগ ডালের চাষ পদ্ধতি গম চাষের সময় খেসারি ডাল চাষ পদ্ধতি সরিষা চাষের সময় বারি মসুর ৮ বারি মসুর ৯ মটর ডাল চাষ পদ্ধতি মসুর ডাল চাষের সময় মুগ ডালের চাষ পদ্ধতি বারি মসুর ৯ কোন মাসে বিনা চাষে ডালের বীজ জমিতে বপন করা হয় বারি মসুর ৮ খেসারি ডাল চা

ব্যবহারঃ- মসুরের ডাল সাধারণত এর প্রধান ব্যবহার যোগ্য হচ্ছে মানুষের খাওয়া হিসেবে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মুগ্রোচক খাবার যেমন পিয়াজি ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

মসুর চাষ এর জন্য উপযুক্ত জমি ও মাটি নির্বাচনঃ

শুনিস কার্সিত বেলে ও দোয়াস মাটি মসুর চাষের জন্য বেশ উপযোগী বলে ধরা হয়ে থাকে এবং এই মাটিতে মসুরের চাষ বেশ ভালো হয়।

মসুর ডালের জাত পরিচিতিঃ

বারি ১ঃ- এই জাতের মশুর কাছে আকৃতি মাধ্যম এবং উপরিভাগের সতেসে থাকে। ফুলের রং সাদা এবং বার ১ জাতিটির বীজের আকার স্থানীয় জাত সমূহের চেয়ে একটু বড় হয়। হাজার বীজের দানার ওজন ১৫ থেকে ১৬ গ্রাম এবং ডাল রান্না হওয়ার সময়কাল ১০ থেকে ১২ মিনিট। এই ডালে আমি সের পরিমাণ ২৬ থেকে ২৮% হয়ে থাকে। এ জাতের জীবনকাল ১০৫ থেকে ১১০ দিন এবং হেক্টর প্রতিফলন১.২ থেকে ১.৮টোন পর্যন্ত হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন,

বারি ২ঃ- এজাতীয় গাছের আকার মাধ্যম প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং গাছের উপরিভাগ সামান্য লতানো হয়। পাতায় শুরু আকর্ষী হয়ে থাকে যা গাছের পাতা গাড়ো সবুজ হয়। এই গাছের কান্ড হালকা সবুজ ও ফুল সাদা হয়ে থাকে। কাণ্ড হালকা সবুজ ও ফুল সাদা হয়।

এই জাতীয় গাছের হাজার বীজের দানার ওজন ১২ থেকে ১৩ ০০ গ্রাম। কাণ্ড হালকা সবুজ ও ফুল সাদা হয়ে থাকে। হাজার বীজির দানার ওজন ১২ থেকে ১৩ গ্রাম এবং রান্না হওয়ার সময় কাল ১৪ থেকে ১৬ মিনিট। আমি সের পরিমাণ ২৭ থেকে ২৯% এবং এই জাতের জীবনকাল ১০৫ থেকে ১১০ টন ও হেক্টর প্রতিফলন ১.৫ থেকে ১.৭ টোন পর্যন্ত হয়।

বারি ৩ঃ- এই জাতটি একটি সংকর জাত হিসেবে পরিচিত এর পাতার রং সবুজ হয়। বীজের রং ধূসর এবং বীজে ছোট ছোট কালচে দাগ আছে। বীজের আকার স্থানীয় জাত অপেক্ষা একটু বড় হয়ে থাকে এবং এ বীজের গড় ওজন ২২ থেকে ২৫ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। ডাল রান্না হওয়ার সময় কাল ১০ থেকে ১২ মিনিট সময় লাগে এবং এই জাতের ডালে আমিশের পরিমাণ ২৪ থেকে ২৬%। এই জাতের জীবনকাল ১০০ থেকে ১০৫ দিন এবং ফলন প্রতি হেক্টর দেড় থেকে দুই টন পর্যন্ত হতে পারে।

বারি ৪ঃ- এই জাতের গাছের রং হালকা সবুজ হয়ে থাকে এবং ফলের দানা আকারে বড় ও পাতার শিষে আকর্ষী আছে। ফুলের রং গারো বেগুনি এবং বীজের আকার স্থানীয় জাত হতে বড় ও চ্যাপ্টা ধরনের হয়ে থাকে। বীজের রং লালচে বাদামি এবং এর ওজন ১৮ থেকে ২০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। 

এই জাতটি মরিচা ও স্ট্যামফাইলিয়াম ব্লাইট রোগ প্রতিরোধে। ডাল রান্না হতে সময় লাগে ১১ থেকে ১৩ মিনিট এবং এতে আমিষের পরিমাণ ২৪ থেকে ২৬% পর্যন্ত হয়। এই যাত্রায় জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫ দিন পর্যন্ত হয় এর ফলন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে এক থেকে দেড় টন।

মসুরের বীজ বপন ব্যবস্থাপনাঃ

মসুরের বীজ ছিটিয়ে বপন করা যায় অথবা শারি করে লাগানো যেতে পারে। প্রতি শারি থেকে শারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে। নিজের হাত ৩০ থেকে ৩৫ কেজি প্রতি হেক্টরে এবং ছিটিয়ে ব্যাপন এর ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ সামান্য বেশি দিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। 

মসুর তিন এর ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ কেজি বীজ ব্যবহার। বিশেষ ক্ষেত্রে কার্তিক মাসের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহ অর্থাৎ অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মুসুর বীজ বপন করা হয়।

স্যার প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনাঃ

মসুরের চাষের জন্য জমিতে শেষ চাষের সময় হেক্টর প্রতি নিম্নরূপ সার ব্যবহার করতে হবে তা উল্লেখ করা হলো।
  • ইউরিয়া ৪০ থেকে ৫০ কেজি।
  • টিএসপি ৮০ থেকে ৯০ কেজি।
  • এমওপি ৩০ থেকে ৪০ কেজি।
উপরে উল্লেখিত সারগুলো শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে এবং যে জমিতে আগে মসুর চাষ করা হয়নি সেখানে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৯০ গ্রাম হারে অনুমোদিত অনুজিব প্রয়োগ করা যেতে পারে। সাধারণত ইনো কলাম ব্যবহার করলে আর ইউরিয়া সার ব্যবহার না করাটাই ভালো হবে বা প্রয়োজন নেই।

পানির সেচ ও আগাছা দমন ব্যবস্থাপনাঃ

সুরের বীজ বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে নিড়ানি দ্বারা একবার আগাছা দমন করা প্রয়োজন হতে পারে। অতি বৃষ্টির ফলে জমিতে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

রোগ বালাইয়ের দমন ও কার্যক্রম ব্যবস্থাপনাঃ

রোগের নামঃ- গোড়া পাচার রোগ।
মসুরের গাছে গোড়া পচা রোগ হলে কাজ আক্রান্ত হলে পাতা ক্রমান্বয়ে হলুদের রং ধারণ করে। আক্রান্ত গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে মারা যায় এবং মাটি ভেজা থাকলে গাছের গোড়ায় মাইসেলিয়াম ও সরিষার দানা আর নাই স্কেলোরোসিয়াম গুটি দেখা যায়। এই জীবাণু গাছের অবশিষ্ট অংশ বিকল্প পোষক ও মাটিতে বেঁচে থাকে এবং পরবর্তীতে ফসল আক্রমণ করে।

অনুকূল পরিবেশ যেমন ভিজা স্যাঁত সাথে মাটিতে রোগ বিস্তার সহায়ক করে থাকে।

করণীয় বা কার্যক্রমঃ- ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং অধিক পরিমাণে পচা জৈব সার ব্যবহার করতে হবে।

রোগের নাম মসুরের মরিচা রোগঃ

এই রোগে আক্রান্ত গাছের পাতায় বিভিন্ন আকৃতির ছোট ছোট মরিচা রঙের গুটি দেখা দিয়ে থাকে। পরবর্তীতে তা গারো বাদামি ও কালো রং ধারণ করে। কাণ্ডে এরকম লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
  • অনুকূল পরিবেশে আর্দ্র আবহাওয়া উপরের প্রকোপ বেশি হয়।
  • ফসলের পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলা উচিত।
  • প্রতিরোধ বিরোধী জমিতে যেমন মসুর তিন ও মসুর চার এরকম মসুর চাষ করতে হবে।
  • স্টিল্ট ২৫০ ইসি ১২ থেকে ১৫ দিন পর পর দুই থেকে তিনবার স্প্রে করতে হবে।
রোগের নামঃ- মুশুরের স্ট্যাম্প ফাইলাম ব্লাইট রোগ।

এই রোগে আক্রান্ত গাছের পাতায় সাদা ছত্রাকে জালিকা দেখা যায়। এবং দূর থেকে আক্রান্ত ফসল আগুনে ঝলসানো মতো দেখা যায়। আক্রমণের শেষে এ পর্যায়ে গাছ কালচে বাদামী রং ধারণ করে এবং ভোর বেলায় পাতা এবং কাণ্ডে এক ধরনের সাদা ছত্রাক জালিকা উপস্থিত দ্বারা সহজে স্ট্যাম্প পাইলাম ব্রাইট রোগ শনাক্ত করা যায়।

অনুকূল পরিবেশে বিকল্প শোষক বায়ু প্রভৃতি মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে থাকে।

রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনাঃ

ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং আক্রমণ দেখামাত্রই roveral ৫০ ডব্লু পি নামক ছত্রাক নাশক ০.২% হরে দশ দিন পর পর দুই থেকে তিনবার স্প্রে করতে হবে।

গুদামজাত ডালের পোকা দমনে ব্যবস্থাপনাঃ

পূর্ণবয়স্ক পোকা ও ক্রীড়া উভয় গুদামজাত দলের ক্ষতি করে থাকে।
এই পোকা ডালের খোসা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে শ্বাস খেতে থাকে। হলে দানা হালকা হয়ে যায় এবং ফলের বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এই জাতীয় ডাল খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।

ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াঃ

গুদামজাত করার আগে দানা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে এবং ডালের দানা শুকিয়ে পানির পরিমাণ ১২% এর নিচে আনতে হবে। বজের জন্য টোন প্রতি ৩০০ গ্রাম ম্যালাথিয়ন বা সেভেন ১০% গোড়া মিশিয়ে পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। ফাস্ট টক্সিন ট্যাবলেট দুটি বড়ি প্রতি ১০০ কেজি গুদামজাত ডালে ব্যবহার করতে হয়।

এই বড়ি আবদ্ধ পরিবেশে ব্যবহার করতে হবে এবং বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি বেশ ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতার পরিমাণ আনুমানিক ১০% এর নিচে রাখতে হবে। তারপর টিনের পাত্র ও পলিথিন সহ চটের ব্যাগ অথবা আলকাত মাটির পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।

ফসল তোলা ও সংরক্ষণ এবং সংগ্রহঃ

মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য চৈত্র অর্থাৎ মার্চ মাসে ফসল সংগ্রহ করা হয়। সুক্ষ ভূমি অঞ্চলে প্রাইম পদ্ধতিতে মসুর চাষ সুখ্য ভূমি অঞ্চলের জমিতে প্রয়োজনীয় রসের অভাব একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমাদের দেশে সাধারণত রোপা আমন ধান কাটার পরে রবি শস্যের আবাদ হয়ে থাকে।

কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ধান কাটার পর জমিতে পরিণত রস থাকে না সেজন্য আবার কোন না কোন খেতে উঁচু জমিতে বপন সময়ের আগে জমির রস শুকিয়ে যায়। তবে এ ধরনের জমিতে বীজ ভেজানো অবস্থায় ভবন করলে স্বাভাবিক পদ্ধতির চেয়ে তিন চার দিন আগে বীজ গজায় এবং উচ্চ ফলনের সহায়ক হয়ে থাকে।

জাত বারি ৩ এবং ৪ এই জাতের বীজ বপণের সময় অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ অর্থাৎ কার্তিক মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময় বলে বিবেচিত করা হয়।

উপযুক্ত জমির নির্বাচন এবং পানি সেচ নিষ্কাশন ব্যবস্থাঃ

মসুর চাষের জন্য দোয়াস মাটি বেশ উপযোগী এবং বীজের পরিমাণ জমিতে পরিমিত পরিমান গাছের জন্য প্রতি হেক্টরে ৩০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়ে থাকে।

বীজ প্রেমিকং পদ্ধতিঃ

রাত্রে প্রয়োজনীয় বীজ বালতি অথবা অন্যান্য পাত্রে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন সকালে পাত্র থেকে দেশগুলি উঠে ছায়াতে রেখে শুধুমাত্র বীজের গায়ের পানি শুকিয়ে ওই দিনেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশ ভবন করে দিতে হবে।

জমিতে সার প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনাঃ

জমি তৈরি ছেস চাষের সময় হেক্টর প্রতি ইউরিয়া ৯০ কেজি টিএসপি এবং ৩৫ কেজি এমওপি স্যার একসাথে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। কোন জমিতে প্রথমবার মসুর চাষ করলে মোশুরের প্রতি কেজি বীজের সাথে ৫০ গ্রাম জীবাণু নাশক ভাতের মার অথবা চিটাগাং মিশিয়ে বপন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

জমি চাষ ও বাপন পদ্ধতিঃ

মাটির প্রকারভেদ তিন থেকে চারটি চাষ ও ভালোভাবে মই দিয়ে জমি সমতল করে তৈরি করতে হবে। জমি তৈরির শেষ চাষের পর পরিমাণ মতো বিজ ছিটিয়ে বপন করে দিতে হবে। এরপর একটি চাষ ও আড়াআড়ি ভাবে দুইটি ময় দিয়ে দিলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। 

এতে করে জমির রস দারুন ক্ষমতা বাড়ে এবং গজাতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়া ২৫ সেন্টিমিটার দূরে সারি করে বীজ বপন করা যেতে পারে তবে জমিতে রস কম থাকলে বিগ ছিটিয়ে বপন করায় ভালো হবে।

মসুর চাষে আন্তঃপরিচার করাঃ

সাধারণত মসুর দৃষ্টি নির্ভর ফসল হিসেবে চাষ করা হয়ে থাকে তবে মাটিতে যদি রসের অভাব হয় এবং রসের অভাব গাছ বৃদ্ধি কম হয় সেক্ষেত্রে চারা গজানোর ২৫ থেকে ৩০ দিন পর একবার হালকা শেচ দিয়ে দিতে হবে। শেষ দেওয়ার পর জমি নিড়ানি দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে পারলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়।

জমিতে পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে সে ব্যবস্থা করে দিতে হবে কারণ মুসুর জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। আগাছার প্রকোপ বেশি হলে বীজ গজানোর ২৫ থেকে ৩০ দিন পর একবার নিড়ানি দিতে পারলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url