পাঙ্গাস মাছ চাষে আয় | শতক প্রতি পাঙ্গাস মাছ ছাড়ার নিয়ম ।

আসসালামু আলাইকুম সম্মানিত মাছ চাষী ভাইয়েরা, যারা পুকুর বা নালা এসব জায়গায় পাঙ্গাস মাছ চাষে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ্যে আমার এই পোস্টটি লেখা। আমার এই পোস্টটি পড়লে আপনারা বুঝতে পারবেন যে পুকুরে অথবা মালাই কিভাবে পাঙ্গাস চাষ করলে লাভবান হওয়া যায়। 
তেলাপিয়া মাছ চাষে আয় ব্যয়শতক প্রতি পাঙ্গাস মাছ ছাড়ার নিয়মপাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি pdfপাঙ্গাস মাছ চাষে খরচ কম হয় কেনকার্প জাতীয় মাছ চাষে আয় ব্যয়পাঙ্গাস মাছের খাবার দেওয়ার নিয়মপাংগাস মাছের রেনু চাষ পদ্ধতিথাই পাঙ্গাস চেনার উপায়পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি pdfপাঙ্গাস মাছের খাবার দেওয়ার নিয়মপাংগাস মাছের খাবার তালিকাপাংগাস মাছের রেনু চাষ পদ্ধতিতেলাপিয়া মাছ চাষে আয় ব্যয়পাঙ্গাস মাছ চাষে আয়কার্প জাতীয় মাছ এবং পাঙ্গাস চাষ পদ্ধতি ও খাবার নির্দেশিকাপাঙ্গাস মাছ চাষে খরচ কম হয় কেন
আমি এই পোস্টটিতে পাঙ্গাস মাছের বিস্তারিত চাষ সম্পর্কে আলোচনা করেছি অবশ্যই আপনারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পোস্ট করলে বুঝতে পারবেন সফলতা অর্জন করা যায়।

পাঙ্গাস মাছ চাষে ভূমিকাঃ

পাঙ্গাস মাছ অল্প নোনা জলে ও মিষ্টি জলে হয়। অন্যান্য মাছের তুলনায় এই মাছের চাহিদা কম, কারণ এই মাছে একটা গন্ধ আছে যা সবাই সহ্য করতে পারে না্। অনেক চাষীদের এই মাছের চাষ সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান নেই। কিন্তু আস্তে আস্তে বাজারে এই মাছের চাহিদা বাড়ছে। এই মাছে কাটা অনেক কম। এই মাছের ফলন রুই বা কাতলা মাছের থেকে ৪ -৫ গুন বেশি।

পাঙ্গাস মাছ চাষে পুকুর নির্বাচনঃ

যেকোনো জলাশয় বা পুকুর যেখানে সূর্যালোক ও বাতাস চলাচল করে সেখানে পাঙ্গাস মাছ পালন করা যেতে পারে। পুকুরকে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। পুকুরের জলের গভীরতা ২-২.৫ মিটার হতে হবে। বিঘা প্রতি ৩০ কেজি চুন জলে মিশিয়ে পুকুরে দিয়ে দিতে হবে। চুন দেবার ৭ থেকে ১০ দিন পরে জলের গভীরতা অনুযায়ী হেক্টর প্রতি ১৫০০ থেকে ২১০০ কেজি মহুয়ার খোল দিতে হবে। 

এরপর ১০-১২ দিন পরে হেক্টর প্রতি ৪২০০ থেকে ৫৫০০ কেজি গোবর মেশাতে হবে। এর ১০ থেকে ১২ দিন পরে পুকুর বা জলাশয় মাছের চারা চড়ার উপযুক্ত হয়।

পাঙ্গাস মাছের চারা প্রয়োগের নিয়মঃ

বর্ষার শেষে এই মাছের পোনা চাষ করা যেতে পারে। বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১৫ গ্রাম ওজনের ৫০ হাজার টি বা হেক্টর প্রতি ৩,৫০,০০০ টি চারা পোনা ছাড়তে হবে। মৃত ছাড়া থাকলে সেগুলোকে তুলে নিতে হবে এবং কিছু চারা পোনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ৩% সাধারণ লবণ জলে বা ফরমালিন দ্রবণে ২-৩মিনিট রাখতে হবে। রোদ ওঠার আগে বা দিনের শেষে চারাগুলোকে জলে ছাড়তে হবে।

পাঙ্গাস মাছের পোনা পালনঃ

মাছের চারা ছাড়ার পরে রাসায়নিক সার দেয়ার দরকার হয় না। প্রতিমাসে বিঘা প্রতি ৪০-৫০ কেজি চুন জলে মিশিয়ে পুকুরে দিয়ে দিতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে দুই একবার জল পাল্টানো যেতে পারে। এই সময় ২০-৩০% জল বার করে নতুন জল দেওয়া যায়। শীতকালে জল পরিবর্তন করা দরকার। এই মাছ ঠান্ডা পছন্দ করে না তাই ঠান্ডার সময জাল ফেলা উচিত না, এর ফলে এদের শরীরে ক্ষত হতে পারে যা এদের পক্ষে ভালো নয়। 

আরো পড়ুন,

এ সময় এদের খাওয়া দাওয়া কমে যায় তাই এই সময় এদের দিকে ভালো করে নজর রাখতে হবে।খাবার-পুকুরে বা জলাশয়ে মাছ ছাড়ার দু-একদিন পর থেকে এদের পরিপূরক খাবার সকাল ৬-৮ টার মধ্যে ওজনের ৩% হারে ৭ থেকে ১০ দিন ধরে দিতে হবে। সারাদিনে একবারই খাবার দিতে হবে। এরপরে ওজনের ৫-৮% হারে খাবার দিতে হবে। খাবারের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। 

যদি মাছ ঠিকমতো খাবার না খায় তাহলে খাবার বন্ধ রাখতে হবে এবং নজর রাখতে হবে যে মাছ কোন প্রকার অস্বাভাবিক আচরণ করছে কিনা। মাছের ওজন ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম হলে সকালের খাবারে মটর সিদ্ধ (৬০%)ও বিকেলের খাবারে বাদামের খোল(৪০%) মেশানো যেতে পারে।

মাছ ধরার কলা কৌশলঃ

বছরে সাধারণত ৩ বার এই মাছ ধরা হয়। বাজারে সাধারণত ৪০০ গ্রাম থেকে ১কেজি ওজনের মাছের চাহিদা বেশি। গরমকালে এই মাছ বেশি বাড়ে, ছাড়ার প্রথম ৩-৪ মাস এই মাছের সব থেকে বেশি বৃদ্ধি পায় তাই এই সময় এদের বাড়তে দেওয়া উচিত। বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাসে এদের ওজন ৭০০ গ্রামের উপরে হয় এই সময় সব মাছ তুলে বিক্রি করে দিয়ে নতুন করে পোনা ছাড়লে শ্রাবণ মাসে আবার ৭০০ গ্রাম ওজনের মাছ হয়ে যাবে যা বাজারে বিক্রি করা যাবে।

এরপর আবার নতুন করে যারা ছাড়া যেতে পারে। এরপর আস্বিন মাসের শেষে এদের ওজন ৩০০ - ৪০০ গ্রাম হলে ৫০- ৬০% মাছ বাজারে নিয়ে যেতে হবে, ওই জায়গায় ২৫- ৩০% পাঙ্গাসের চারার সাথে দীঘা প্রতি ৬০০- ৭০০টি রুই ও কাতলা মাছ ছাড়া যেতে পারে। ফাল্গুন মাসে এদের ওজন ৫০০-৬০০ গ্রাম হলে বাজারে বিক্রি করতে হবে। এরপর ঠান্ডা পড়ে যাবে ফলে এদের বৃদ্ধি ভালো হবে না। ঠিকমতো খাবারও পরিচর্যা করলে ৩ মাসেই এই মাসের ওজন ৫০০ -৬০০ গ্রাম হয়ে যাবে।

পাঙ্গাস মাছের রোগ বালায় দমনঃ

মাছের রোগ খুব বেশি দেখা যায় না। তিন মাস পরে পরে মাস তুলে নেওয়া হয় তাই এদের মধ্যে খুব একটা রোগ দেখা যায় না। সঠিক পরিচর্যা, চুন প্রয়োগ করা ও পুকুর বা জলাশয়ের জল পরিস্কার রাখলে এদের মধ্যে রোগের প্রাদুর্ভাব কম হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url