কবুতর পালনের নিয়ম | কোন জাতের কবুতর পালন লাভজনক ।

আসসালামু আলাইকুম সম্মানিত পাঠক ভাই ও বোনেরা, কবুতর একটি শখের জিনিস যারা কবুতর পালন করে থাকেন বিশেষ করে বাসা বাড়িতে অথবা খাওয়ারই পর্যায়ে তাদের উদ্দেশ্যে আমার এই পোস্টটি লিখা। 
কোন জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয়কবুতর পালন প্রশিক্ষণখাঁচায় কবুতর পালন পদ্ধতিরুমের ভিতর কবুতর পালনআবদ্ধ অবস্থায় কবুতর পালনকোন জাতের কবুতর পালন লাভজনককবুতর পালন ও চিকিৎসাকবুতর পালন পদ্ধতি বই pdfকোন জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয়রুমের ভিতর কবুতর পালনকবুতর পালন প্রশিক্ষণ	কবুতর পালনে লাভ কেমনখাঁচায় কবুতর পালন পদ্ধতিকবুতর পালন পদ্ধতি বই pdfকবুতর পালন লাভজনক কেনদেশি কবুতর পালন পদ্ধতি
কিভাবে কবুতর পালন করলে অথবা রোগ বালাই সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে কবুতর পালনে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় তা এই পোষ্টের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো।

কবুতর পালন ও চিকিৎসাঃ

কবুতর পালন শুরু করার আগে এর খাবার, রোগ এবং কবুতরের দাম সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন শখের পাখি পালক ও বিক্রেতা নির্মল দাস। কবুতর পালন করার জন্য অতিরিক্ত কোন খরচ হয় না। কবুতরকে সহজেই পোষ মানানো যায়। বাড়ির যেকোনো কোন বা আঙিনা অথবা বাড়ির ছাদ কিংবা কার্নিশের মত ছোট বা অল্প জায়গাতে ও কবুতর পালন করা যায়।

আরো পড়ুন,

এমনকি ছাদের সঙ্গে ঝুড়ি ঝুলিয়েও কবুতর পালন করা সম্ভব। কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং শক্তি বর্ধক। অন্যান্য পাখির মাংসের চাইতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। ফলে আমিসের পাশাপাশি বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্যও কবুতরের মাংস খাওয়া হয়ে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করে অনেকেই অল্প সময়ে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে দাঁড় করাতে পেরেছেন। কবুতর সাধারণভাবে জোড়ায় বেঁধে বাস করে। 

প্রতি জোড়ায় একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী কবুতর থাকে। এরা ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন এরা ডিমের মাধ্যমে বাচ্চা প্রজনন করে থাকে। ডিম পাড়ার পর স্ত্রী ও পুরুষ উভয় কবুতর ই পর্যায়ক্রমে ডিমে তা দেই। কবুতরের কোন জোড়া হঠাৎ ভেঙে গেলে সেই জোড়া তৈরি করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। নতুন জোড়া তৈরি করার জন্য স্ত্রী ও পুরুষ কবুতরকে এক ঘরে কিছুদিন রাখতে হয়।

কবুতর পালনের বিভিন্ন সুবিধা ও বাসস্থানঃ

ভালবাসিস খান কবুতর পালনের জন্য খুবই দরকারি। উত্তম নিষ্কাশন, পর্যাপ্ত সূর্যের আলো এবং বাতাস চলাচল আছে এরকম উঁচু এবং বালুময় মাটিতে কবুতরের ঘর করতে হয়। যা খামারির আবাসস্থল থেকে ২০০ থেকে ৩০০ ফুট দূরে ও দক্ষিণমুখী হওয়া উচিত। মাটি থেকে ঘরের উচ্চতা ২০ থেকে ২৪ ফুট এবং খাচার উচ্চতা ৮ থেকে ১০ ফুট হওয়া ভালো।

একটি খামারের জন্য ৩০ থেকে ৪০ জোড়া কবুতর আদর্শ। কবুতরের খোপ ২ বা তিন তলা বিশিষ্ট করা যায়। খোপের মাপ প্রতি জোড়া ছোট আকারের কবুতরের জন্য ৩০ সেন্টিমিটার * ৩০ সেন্টিমিটার * ২০ সেন্টিমিটার এবং বড় আকারের কবুতরের জন্য ৫০ সেন্টিমিটার * ৫৫ সেন্টিমিটার * ৩০ সেন্টিমিটার। অল্প খরচে সহজে ঘর তৈরি এবং স্থানান্তরযোগ্য যা কাঠ, তিন, বাস, খর ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা যায়।

খামারের ভিতরে নরম, শুষ্ক খড় -কুটা রেখে দিলে তারা ঠোঁটে করে নিয়ে নিজেরাই বাসা তৈরি করে নেই। ডিম পাড়ার বাসা তৈরির জন্য ধানের খড়, শুকনো ঘাস কচি ঘাসের ডগা জাতীয় উপাদান দরকার হয়। খোপের ভিতর মাটির সরা বসিয়ে রাখলে কবুতর সরাতে ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা ফুটাই। সাধারণত একটি ভালো জাতের কবুতর বছরে ১২ জোড়া ডিম দিতে সক্ষম। এই ডিমগুলোর প্রায় প্রতিটি থেকে বাচ্চা পাওয়া যায়।

এই বাচ্চা চার সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী হয়। একটি পূর্ণাঙ্গ বয়সের কবুতর ডিম দেবার উপযোগী হতে পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগে। কবুতরের ডিম থেকে মাত্র ১৮ দিনেই বাচ্চা সাধারণ নিয়মে ফুটে থাকে। এই বাচ্চাই পাঁচ থেকে ছয় মাস পরে নিজেরাই ডিম প্রদান শুরু করে। ফলে কবুতর বংশ পরম্পরায় প্রাকৃতিক নিয়মে নিজেরাই বাড়াতে থাকে নিজেদের সংখ্যা। দেশি কবুতরের মাংস প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

একটি খুব ভালো প্রজাতির কবুতর লালন করতে এক বছরের মধ্যে সেই জোড়া থেকে কয়েক জোড়া কবুতর পাওয়া খুব বেশি আশ্চর্যজনক বিষয় নয়। কবুতরের প্রজনন, ডিম উৎপাদন ও ডিম ফুটানো হাঁস-মুরগির মতো যে কোন মদ্দা কবুতর মাদি কবুতরের সঙ্গে সহজে জোড়া বাঁধে না। এদেরকে একসঙ্গে এক সপ্তাহ রাখলে জোড়া বাধে।

ডিম পাড়ার পর থেকে মদ্দা ও মাদী কবুতর পর্যায়ক্রমে ডিমে তা দিতে শুরু করে। মাদি কবুতর প্রায় বিকেল থেকে শুরু করে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ডিমে তা দেই এবং বাকি সময়টুকু অর্থাৎ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মদ্দা কবুতর তা দিয়ে থাকে। তা দেয়ার পঞ্চম দিনেই ডিম পরীক্ষা করে উর্বর বা অনূর্বর ডিম চেনা যায়। আলোর সামনে ধরলে উর্বর ডিমের ভিতর রক্তনালি দেখা যায়। কিন্তু অনুর্বর ডিমের ক্ষেত্রে ডিমের ভেতর স্বচ্ছ দেখাবে।

জন্মের প্রথম দিন থেকে ২৬ দিন বয়স পর্যন্ত কবুতরের বাচ্চার ক্রমবর্ধমান অবস্থা থাকে। প্রথমে সারা দেহ হলুদ পাতলা বর্ণের লোন দিয়ে ঢাকা থাকে। এই সময় নাক ও কানের ছিদ্র বেশ বড় দেখায়। প্রায় চার থেকে পাঁচ দিন পর বাচ্চা চোখ খুলে বা ফুটে। ১৫ দিনে সমস্ত শরীর পালকে ছেয়ে যায়। প্রায় ১৯-২০ দিনে দুটো ডানা এবং লেজ পূর্ণতা লাভ করে ও ঠোঁট স্বাভাবিক হয়। এইভাবে ২৬-২৮ দিনে কবুতরের বাচ্চা পূর্ণতা লাভ করে।

পিজিয়ন মিল্কঃ

কবুতরের খাদ্য থলিতে পিজিয়ন মিল্ক উৎপাদিত হয়। কবুতরের ছানার জন্য একটি আদর্শ খাবার।

কবুতরের খাবারঃ

হাঁস-মুরগির মত কবুতরের খাবারে শ্বেতসার,চর্বি, আমিষ, খনিজ, ভিটামিন প্রভুতি থাকা প্রয়োজন। কবুতর তার দেহের প্রয়োজন এবং আকার অনুযায়ী খাবার খেয়ে থাকে। প্রতিটি কবুতর দৈনিক প্রায় ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম পর্যন্ত খাবার খেয়ে থাকতে পারে। প্রধানত গম, মটরস, খেসারি, ভুট্টা, সরিষা, জব, ধান, কালায়, ইত্যাদি শস্যদানা কবুতরের প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কবুতরের খাদ্য তালিকাঃ

বাণিজ্য িক ভিত্তিতে কবুতর উৎপাদনের জন্য নিচে কিছু মিশ্র খাদ্য ব্যবহার করা ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। নিচে সেগুলোর তালিকা আকারে প্রকাশ করা হলোঃ
  • ভুট্টা ৩৫ %
  • মটর ২০ %
  • গ্রাম ৩০%
  • ঝিনুকের গোড়া বাছনাপাথর ০৭%
  • অ্যামাইন অ্যাসিড ০৭%
  • লবণ ০১%
এর সঙ্গে কবুতরের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাকরে দিতে হবে। একপাত্রে কবুতরের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার ও অন্য পাত্রে প্রয়োজনমতো পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি রেখে দিতে হবে।

কবুতরের জন্য বাসস্থান নির্বাচনঃ

শীতে কবুতরের খুব রোগব্যাধি হয়ে থাকে এজন্য শীতকালে ঘর বাতাস মুক্ত রাখতে হবে রাতে ঘরে তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে এবং ঘর শুকনো এবং পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘরের বাতি নেভানোর আগে কবুতরের খাঁচা থেকে খাবার পানি পাত্র বের করে দিতে হবে।

সকালে সাধারণত ঠান্ডা বেশি থাকে তাই দেরিতে ঘরে প্রবেশ করতে হবে এবং খাবার দিতে হবে। কবুতরের ঘরের জন্য পারলে আলাদা পোশাক পরিধান করে প্রবেশ করতে হবে। কেননা বাইরে থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি বা ময়লা আবর্জনা পোশাকের মাধ্যমে কবুতরের ঘরে প্রবেশ করতে পারে।

কবুতরের রোগবালাই দমন ও ব্যবস্থাপনাঃ

সাধারণত কবুতরের শাল মেনে লুসিসঃ- এই জাতীয় রোগ বালাই হয়ে থাকে। সিনেমা যুক্ত আঠালো ফেনা ও দুর্গন্ধ যুক্ত ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। দেহে ক্রমাগত শুকিয়ে যায় এবং ভারসাম্যহীনতা ওপার আঘাত দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা ব্যবস্থাঃ

  • অ্যান্টিবায়োটিক সেন্সিটিভিট টেস্ট করে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা ভালো আর ভিটামিন সহ মিনারেলস খাবার খাওয়াতে হবে।
  • প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে নিচে কিছু প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের পদ্ধতি তুলে ধরা হলোঃ জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে এবং টিকা প্রদান করে রাখতে হবে।
  • করাইজা অথবা আউলস হেডঃ- হেমোফিলা ইনফ্লুয়েঞ্জা এই জাতীয় রোগের লক্ষণ যেমন সর্দি চোখের পাতা ফুলে প্যাঁচার মতো দেখায়। চোখ দিয়ে পানি জাতীয় পদার্থ বের হয়।
এন্টিবায়োটিক সেনসিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক করতে হবে এবং সঙ্গে ভিটামিন মিনারেল ইত্যাদি খাবার খাওয়াতে হবে।জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং টিকা প্রদান করতে হবে। এছাড়া কবুতরের আরো বিভিন্ন রোগ বালাই আছে যেমন মাইক্রো প্লাজমোসিস, ক্ল্যামাইডিওসিস, নিউ ক্যাসল, দীপ্তেরও স্মল ফক্স, ইত্যাদি রোগ দ্বারা কবুতর আক্রান্ত হয়ে থাকে। 

উপরোক্ত চিকিৎসা সঠিকভাবে নিলে কবুতর অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে তাছাড়া ভিটামিন বি সিক্স খোদা মন্দ দেখায় ছানার বৃদ্ধি ব্যাহত হয় প্যারালাইসিস ও ফিরোসিস হতে পারে এরকম ভিটামিন বি সিক্স এক্স খাওয়ালে সবচাইতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url